বাংলায় প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।’ তো কথা হচ্ছে, কী এই গাজন উৎসব? আর সন্ন্যাসীদের সঙ্গে এর যোগ কোথায়? গাজন আসলে পূজাকেন্দ্রিক উৎসব। আর তা সম্পন্ন হয় সন্ন্যাসীদের মাধ্যমেই। চৈত্র মাসের শেষের এ উৎসব মানুষের কাছে বেশ উপভোগ্য। কলকাতার দিকে এর খুব ঝোঁক না থাকলেও, এর দৃষ্টান্ত মেলে কলকাতা থেকে একটু গ্রামের দিকে এলেই।
ঠিক তেমনই কলকাতা থেকে একটু দূরেই শান্তিপুর। আর শান্তিপুরের এক নম্বর কলোনি এলাকার গাজন উৎসব পালিত হয় বেশ সমারোহে। আসলে গাজন কথাটার দুটো অর্থ আছে। এক বলা হয় গর্জন শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ গাজন। অন্যভাবে, গা শব্দের অর্থ গ্রাম আর জন কথার মানে হলো জনসাধারণ। গ্রামীণ জনসাধারণেরই উৎসব হওয়ায় এর নাম হয় গাজন। এ উৎসবে সামিল হবার বিশেষ উৎসাহ যুবক যুবতীদের। শুরু হয় তাদের সন্ন্যাস নেবার পালা।
লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এদিনে হর গৌরীর বিয়ে হয়েছিল। ঠিক নীলষষ্ঠীর পরের দিন চড়কের মাধ্যমে পালিত হয় গাজন উৎসব। সন্ন্যাসীরা চড়ক ঘোরে। পিঠে বড়শি ফুটিয়ে বাতাসা ছড়াতে ছড়াতে চলতে থাকে চড়কের পাক। আর চারদিক থেকে ভক্তদের মুখে শোনা যায়, ‘হর হর মহাদেব’। আবার কেউ হয়তো বলতে থাকে, ‘জয় শিব’। আর শান্তিপুরের এই এলাকায় চড়কের মূল আকর্ষণ হল একজনের পিঠে দশটা বড়শি ফোটানো। এ দৃশ্য দেখতেই চড়কের গোটা মাঠ জুড়ে ভিড় জমে যায় দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষের।
এ উৎসবের নিয়ম বলতে, সন্ন্যাস নিতে গেলে টানা সাতদিন নিরামিষ খেতে হয়। মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, তা না করলে ঠাকুর রুষ্ট হন। উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হল নিজেদের কৃচ্ছসাধনের মাধ্যমে দেবতাকে সন্তোষ দেওয়া। এই গাজন দেখতে হলে আপনাকে সোজা চলে আসতে হবে শান্তিপুরে। কলকাতা থেকে মাত্র দু ঘণ্টার পথ। শান্তিপুরগামী ট্রেন ধরে সোজা চলে আসুন শান্তিপুর স্টেশন। তারপর সেখান থেকে টোটো করে সোজা এক নম্বর কলোনি। এখানে অনেক জায়গাতেই পালিত হয় গাজন উৎসব। আর দেরি না করে দশ বড়শি গাঁথা চড়কের দৃশ্য দেখতে চলে আসুন শান্তিপুর।
চিত্র ঋণ – তুষার শুভ্র দেবনাথ
Discussion about this post