বৈদিক যুগে দুধ আর দুধ থেকে তৈরী দধি মাখন ছিল দেব ভোগ্য। বিশেষ করে ননী ও মাখন অতি প্রিয় ছিল নাকি শ্রীকৃষ্ণের। এই জন্য দুধজাত দ্রব্য খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হত। এই বার দেখা যাক এই বাংলার বুকে কী রূপ মিষ্টি প্রচলিত ছিল। যতদূর জানা যায় খন্ড জাতীয় মিষ্টি প্রচলিত ছিল বেশী। শর্করাজাত নানা প্রকারের খন্ড দেবতাকে নিবেদন করা হত। সেকালে শেষ পাতে বাঙালির খন্ড খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এর মধ্যে ক্ষীর খন্ড ছিল বিশেষ জনপ্রিয়।
সরপুরিয়া সেই সময়ে বিশেষ রকমভাবে প্রসিদ্ধ ছিল। এটাও জানা যায় স্বয়ং চৈতন্যদেব মিষ্টির প্রতি আসক্ত ছিলেন। বিশেষ করে সরপুরিয়া। প্রচলিত মতে সরপুরিয়ার সৃষ্টিকর্তা কৃষ্ণনগরের অধরচন্দ্র দাস। আবার মতান্তরে সরপুরিয়ার সৃষ্টিকর্তা তাঁরই পিতা সূর্য কুমার দাস। কথিত আছে যে তিনি নাকি রাতে দরজা বন্ধ করে ছানা, ক্ষীর ও সর দিয়ে তৈরী করতেন সরপুরিয়া। তারপর তাঁরই আবিষ্কার সরভাজা। রোজ সকালে এই মিষ্টি মাথায় করে নিয়ে তিনি ফেরি করে বেড়াতেন। যুবক অধর চন্দ্র তাঁর পিতার কাছ থেকে এই মিষ্টি তৈরীর কৌশল জেনে নেন। আর ১৯০২ সালে নেদের পাড়ায় নিজের নামে একটা মিষ্টির দোকান প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তী কালে এক অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তিনিও নাকি তাঁর বাবার মতোই সরপুরিয়া প্রস্তুত প্রণালী কেউ যাতে জানতে না পারে তার জন্য রাতে দরজা বন্ধ করে মিষ্টি তৈরী করতেন। তবে ময়রারা কৌশলে সরপুরিয়া আর সরভাজা প্রস্তুতি জেনেও যায়।
সরভাজা এখন শুধু কৃষ্ণনগরেরই একটি বিখ্যাত মিষ্টি নয়। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সুনাম বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো ছাড়াও কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোতে সরভাজার চাহিদা অন্য সময়ের থেকে বেশি থাকে। আসলে বাঙালির মিষ্টির কথা শুরু করলে তা শেষ করা মুশকিল কারণ আমাদের মিষ্টির ভান্ডার হাজার রকম মিষ্টি নিয়ে সমৃদ্ধ। বাঙালি ভোজন রসিকও। তাই মিষ্টি হোক বা অন্য খাবার, সেখানে এক্সপেরিমেন্ট করতে খুব পছন্দ করে!
Discussion about this post