সে পোলাও হোক বা পায়েস। কাজু বাদামে কামড় না বসালে ঠিক জমে না যেন। কাঁচা কাজু তো আর খাই না আমরা। পাতে পড়ার আগে কতশত কারসাজি যে করতে হয়! আমরা তার খবরও রাখি না। তাই কাঁথির খোঁজও রাখা হয় না বিশেষ। মূলতঃ প্রক্রিয়াকরণের জন্যই কাঁথির কাজুর সুনাম আছে বাজারে। তবে এই বাদামের চাষও হয় এখানে। পদিমা,দিঘা, তাজপুর, নামাল, গারুয়া, মাজনা, দানা এসব অঞ্চলেই মানুষ কাজু চাষ করে।
উপকূলবর্তী এলাকা কাঁথি। একসময় হত ভীষণ ভূমিক্ষয়। কাজু চাষের কথা ভাবা হয় ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্যই। ক্রমে এই চাষ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। বিকল্প অর্থনীতির পথ দেখায় কাজু শিল্প। আস্তে আস্তে কাঁথির কাজুতে মেতে ওঠে গোটা কলকাতা। পরে মুম্বই, গোয়া, কানপুর, লখনউ, বেনারস ও রাজস্থানও সাদর অভ্যর্থনা জানায় তাকে। সারা বছর জুড়ে কাজুবাদাম নিয়ে ব্যস্ততা লেগেই থাকে। চৈত্রমাসে মুকুল আসে গাছে। বৈশাখে ফল ধরে। বর্ষা নামার আগেই পেড়ে নিতে হয় গাছের সমস্ত ফল। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে থাকা মানুষেরা। সারা বছর জুড়েই চলে প্রসেসিংয়ের কাজ। কাজুবাদাম গাছে প্রথম যে ফল ধরে তাকে স্থানীয় লোকে রসবাদাম বলে জানে। এই ফলের বীজ, প্রসেসিংয়ের পর কাজুবাদাম হয়। খোসা চলে যায় রংশিল্পের কারখানায়। প্রসেসড কাজু আসে ভোজনবিলাসীর পাতে।
কাঁথি মহকুমায় অন্ততঃ সাতশো কারখানা আছে। স্থানীয় কাজুর আমদানি হয় তাতে। আফ্রিকার তাঞ্জিনিয়া, আইভরি কোস্ট,ঘানা, নাইজেরিয়া, দঃ আফ্রিকার কাজুবাদামও আমদানি হয় কাঁথির কারখানায়। পরিবহনের পথ হিসেবে প্রথমে জলপথকে বাছা হয়। জাহাজে চড়ে কাঁচা কাজুর দল এসে পৌঁছায় গোয়া। সেখান থেকে ট্রেনে করে হাওড়া বা খড়গপুর। তারপর ট্রাকে চেপে আসে কাঁথি। এবারে শুরু প্রক্রিয়াকরণ। একপ্রস্থ ঝাড়াই বাছাই হয়ে কাজু ঢোকে গুদামে। সেখান থেকে কিছু বেরিয়ে পড়ে রোস্টেড হতে। কিছু চলে যায় সল্টেড হবে বলে। এখন কিন্তু সেদ্ধ কাজুর চাহিদাই বেশি। মূলত মহিলাকর্মীরাই এ কাজ করেন। আগে হাতেই প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলত। এখন যন্ত্র এসে গেছে কারখানায়। ফলে বেড়েছে কর্মীদের স্বস্তি। প্রসেসড কাজুর তুমুল সুনামই ব্যবসায়ীদের আধুনিকীকরণে বাধ্য করেছে।
প্রোটিন ও ফ্যাটের স্বাস্থ্যকর অনুপাতে সমৃদ্ধ এই বাদাম। যার একশো গ্রামেই মেলে পাঁচশো পঁচাত্তর কিলো ক্যালোরি শক্তি। দামও খুব বেশি নয়। এক কিলো ভাঙা কাজু মিলে যাবে পাঁচশো টাকায়। যদি অতি উন্নত মানের কাজু কিনতে হয় তবে আটশো টাকা পড়বে প্রতি কেজিতে। এর মাঝেও ছ’শো সাতশো টাকা কিলো দরেও কাজু পাওয়া যায়। দাম নির্ভর করে মানের উপর। কাজুবাদামের আদি ভূমি ব্রাজিল। পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতে আসে কাজুবাদাম। তাও প্রায় পাঁচশো বছর আগে। করোনা মহামারিতে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শিল্প কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এখন। ভারতীয় বাজারে গোয়া কিংবা কেরালার কাজুর পাশাপাশি এখনও স্বমহিমায় বিরাজমান কাঁথির কাজুবাদাম।
Discussion about this post