আগামী এক সপ্তাহ সবার খাবার টেবিলে হাঁস থাকতে পারে।’ স্থানীয় পত্রিকার এই রিপোর্টে রীতিমতো হুলুস্থূল কান্ড চারিদিকে। যদিও এমন কিছুই যে ঘটতে চলেছে আন্দাজ করেছিলেন কানাডার পূর্ব-মধ্য সাসকাচোয়ানের ফোম লেক, এলফ্রস এবং শেহো অঞ্চলের বাসিন্দারা। কিন্তু কেন? কী হয়েছিল পরিস্থিতি?
১৯৪০ সালের ৪ নভেম্বর, সোমবার। চারিদিকে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ছেয়ে। গোলাবারুদের সেই অধ্যায়ে সাধারণ মানুষ প্রায় ঘরবন্দী। খাদ্যের সঙ্কট ঘিরেছে যুদ্ধরত দেশগুলোকে। ঠিক সেই সময়ের কুয়াশাচ্ছন্ন এক রাত। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন ঘুমোতে চলেছেন। হঠাৎ ছাদে অজানা এক বিকট শব্দ। একবার নয় বারবার। কিছু যেন আঁচড়ে পড়ছে উপরে। প্রত্যেকে তখন ভয়ে সিঁটিয়ে। সবাই ধরেই নেন এ নির্ঘাত শত্রুপক্ষের আক্রমন। একনাগাড়ে চার ঘন্টা চলার পর বন্ধ হল সেই ভয়ঙ্কর শব্দ। সাহস নিয়ে বেরলেন কিছুজন, আর তারপর তো সবাই তাজ্জব। চারিদিক যেন তুষার বৃষ্টির মতোই হয়েছে সাদা হাঁসের বৃষ্টি। প্রায় পাঁচ হাজার বিশেষ প্রজাতির হাঁস মাটির উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাফেলহেড নামের সেই হাঁসগুলোর কয়েকটা বাদে সবগুলোই ছিল মৃত।
শুরু হল বৈজ্ঞানিক তদন্ত। নানা মতের ভিড় জমলেও আসল কারণের হদিশ পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের সিদ্ধান্ত ছিল বাফেলহেড হাঁসগুলো কুয়াশার মধ্যে দিক হারিয়ে ফেলে। ফোম লেকের আলো দেখে একে শিমারিং লেক মনে করেছিল। দিক হারানোর কারণে পথেই তাদের মৃত্যু ঘটে। তারপর কেটেছে অনেককটা বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফলাফলে আক্রান্ত সবাই। এই ঘটনাটি তখন চাপা পড়ে যায়।
ঘটনাটি এরপর ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে আর্কটিকে জীববিজ্ঞানী কেরির নজরে আসে। চরম উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন কারণ অনুসন্ধানে। দীর্ঘ ষোলো বছরের গবেষণা পর তিনি এই ঘটনার জন্য আবহাওয়াকেই দায়ী করেন। বাফেলহেড একটি ছোট পরিযায়ী সামুদ্রিক হাঁস। কানাডার বোরিয়াল বনের গাছগুলোতেই প্রজনন করে থাকে। ‘স্পিরিট ডাক’ নামেও পরিচিত। ১২-১৫ সেকেন্ড একটানা জলে ডুব দিয়ে পতঙ্গ খেয়ে বেড়ায়। আর স্থান পরিবর্তনের সময় এত পরিমান পেট ভরায় যে ওজন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। কেরির মতে ওদের সেদিন স্থান পরিবর্তনের সময় ছিল। খাওয়ার খেয়ে যাওয়ার সময় শীতের রাতেই হঠাৎ তাপমাত্রা বেশ কমে যাওয়ায় ওদের ডানায় বরফ জমা পড়ে। তাই ফোম লেক, এলফ্রস এবং শেহো অঞ্চলের কাছাকাছি এসে তারা আর উড়তে পারেনি। প্রচন্ড ঠান্ডায় মৃত্যু হয় আর মৃত অবস্থায় নিচে আছড়ে পড়তে থাকে। তবে কারণ যাই থাকুক না কেন, বিশ্ব ইতিহাসে সেই দিনটা ছিল নিঃসন্দেহে এক অদ্ভুতুড়ে ঘটনার দিন।
Discussion about this post