ভালো কাজ করলেই কপালে জোটে তার পুরস্কার। হাজার করতালির মাঝে গদগদ মুখে ঝলমলে কাগজে মোড়া পুরস্কারের বাক্সটা। কখনো আবার ঝুলছে ফিতে বাঁধা মেডেলটা। তবে শুধুই মানুষ নয় অবলা চারপেয়েরাও হতে পারে পুরস্কারের ভাগীদার। আমরা জানি, কুকুরদের একটি বিশেষ শক্তি হল ঘ্রাণশক্তি। আর সেই কারণেই খুনী ধরতে হোক বা সেনাদলে ট্রেনিং দিয়ে কুকুরকে পোষ মানানো হয়। যারা পরোক্ষভাবেই হাত লাগিয়েছে দেশরক্ষায়। সেইসব কুকুরদের হাতেও এসেছে পুরস্কারের সম্মান। চলুন তবে কৃতি সেইসব কুকুরদেরদের কৃতিত্বের অংশটুকু জানি।
সেনা কুকুর ভিদা ও শোফি, যাদের সাহসিকতা ও ক্ষিপ্রতার পরিচয়ই এনেছে সম্মান। শত্রুপক্ষের উপর নজর রাখতে অডিও ও ভিজুয়াল পদ্ধতির বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিল ভারতসেনা। আর তাতেই এক নাগাড়ে সাহায্য করে চলে ভিদা ও শোফি। বুলেট প্র্যুফ জ্যাকেট জড়িয়েই তারা টহল দিত গুপ্তচরের মতো। ১ কিমি দূরত্বে নিরাপদে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা ও ট্রান্সমিটারের সাহায্যে শত্রুপক্ষের সমস্ত ডেটা জমা করত। পরে সেগুলোই অ্যানালাইসিস করে তদন্তকারীদের অভিযান চলত। তাই ভিদা ও শোফি ‘চিফ অফ আর্মি স্টাফ কমেন্ডেশন কার্ডে’ সম্মানে সম্মানিত।
কিছু কুকুর আবার মৃত্যুর পরেও পেয়েছে এমন সম্মানের মুকুট, যেমন রাকেশ। করোনার প্রকোপ বাড়লে রাকেশকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় তার মালিক। এক চায়ের দোকানে হতভাগ্যের মতো বসে থাকত রাকেশ। চা দোকানের ছোঁড়া খাওয়ারগুলো গিলত। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ায় চা দোকানও হল বন্ধ। ফলে আবার খিদে পেটে অনাথ হয় কুকুরটি। হঠাৎই একদিন প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্টাবুলারি পারসোনেল(PAC) এবং সাব ইন্সপেক্টর উমেশ সিং কুকুরটির সুকরুণ মুখের মায়ায় আটকা পড়লেন। আশ্রয় দেন তাকে এবং ওই চা দোকানের মালিকের নাম অনুসারেই নাম দেন রাকেশ। ওই সারমেয়টি তারপর থেকেই প্যাকের আদর যত্নে বড় হতে লাগল। নানা দুঃসাহসিক কাজে এগিয়ে যেত রাকেশ। সেনাদের সহায়তায় একডাকে ছুট দিত সে। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সেই ভেতর ভেতর কিডনির অসুখে মুসড়ে পড়ে রাকেশ। প্যাকের কর্মীরা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মারা যায় রাকেশ। মৃত্যুর পর তাকেও সম্মান ও মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
আজকের এই গণতন্ত্র দিবসে দেশের সেইসব অবলা শরিকদের একবার স্যালুট না দিলেই নয়। যারা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই এগিয়ে চলে গোলাবারুদের মাটিতে। সেনাবাহিনীর পাশে জাঁদরেল শরীরে সর্বদা তৈরী শত্রুর ওপর ঝাঁপাতে।
Discussion about this post