একটা সময় ছিল যখন যে কারোর কাছেই বই ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। কোনো নতুন বই পেলেই আগে পাতার ভাঁজের সেই মাতাল করা গন্ধ উপভোগ করা চাই – ই। নতুন কিছু জানবার বা চেনবার আকাঙ্খা পূরণের একমাত্র রাস্তাই ছিল বই পড়া। এবিষয়ে লিও টলস্টয়ের একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে যায়। ‘তিনটি জিনিস মানুষের জীবনে বিশেষ ভাবে প্রয়োজন, বই, বই এবং বই’। কিন্তু যুগ পাল্টালো। এই ব্যস্ত প্রতিযোগিতার যুগে মানুষের আর ওত সময় কোথায়? সবকিছুই এখন নয় বোকাবাক্স আর নইলে মুঠোফোনে বন্দী। আর সঙ্গে দোসর তো রয়েছেই, ইন্টারনেটে গেম খেলার সর্বনেশে নেশা!
তবে মানুষের এই বই বিমুখতা যে সমাজের পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর তা বোঝার মত বিজ্ঞজনেরও অভাব নেই সমাজে। তাই বইয়ের প্রতি আগ্রহ ফেরাতে নতুনত্ব এক পদক্ষেপ নিয়েছে উলুবেড়িয়ার শ্যামপুর নাওদা নয়নচাঁদ বিদ্যাপীঠের কর্তৃপক্ষরা। কী সেই পদক্ষেপ? হাওড়া, কলকাতা মিলিয়ে বিভিন্ন জায়গাতেই শীতকালীন বইমেলার সাক্ষী থেকেছেন সবাই। এবার শিশু কিশোরদের জন্য বাইরে নয়, খোদ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই বইমেলার আয়োজন করেছিল এই স্কুল কর্তৃপক্ষ। বেশ নামী দামি প্রকাশনা সংস্থা স্টল দিয়েছিল স্কুলে আয়োজিত দুদিনের এই বইমেলায়। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, তাদের অভিভাবকরাও সামিল হয়েছিলেন ক্ষণিকের এই বইমেলায়।
জানা যায়, শ্যামপুরের এই স্কুলের শিক্ষক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস মহাশয়ের পরিকল্পনাতেই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে অবশ্য সায় দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক অরুণাভ বাজানী এবং সহ শিক্ষকরা। মূলত দূরদূরান্তের পড়ুয়াদের অনেকের পক্ষেই কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বাদ নেওয়াটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এই ভাবনা থেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের মাঠেই বইমেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে দুদিনের এই বইমেলায় অবিশ্বাস্যকর সাড়া পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক অরুণাভবাবুর মত যে তারা এবার থেকে প্রতিবছরই এভাবে বইমেলার আয়োজনে সামিল হবেন।
Discussion about this post