রজনীগন্ধা ফুলের স্টিকে সাজানো ফুলদানি। কোথাওবা একগুচ্ছ গোলাপ। রঙিন মোড়কে ঢাকা উপহার। আত্মীয় বন্ধুবান্ধবের শুভেচ্ছা, এলাহী খাওয়াদাওয়া। বিবাহবার্ষিকী বলতে এসব ছবিগুলো তো ফুটে ওঠে চোখের সামনে। কিন্তু এই চিরাচরিত ট্রেন্ডের বিপরীতেই চলেন দঃ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরের এক মানুষটি। আর পাঁচজনের মতো তিনিও কিন্তু এক সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। নাম সুমিত মন্ডল, পেশায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎবিভাগীয় দফতরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার।
গত ৩০ নভেম্বর ছিল তাঁর অষ্টম বিবাহবার্ষিকী। আজ থেকে আট বছর আগে প্রভাতী মণ্ডলের সঙ্গে সংসার বেঁধেছিলেন সুমিত বাবু। কোনওরকম আড়ম্বরের উদযাপন না করে, আয়োজন করলেন রক্তদান শিবিরের। থ্যালাসেমিয়া রুগী থেকে যে কোনও অস্ত্রোপচারে অপরিহার্য্য হল রক্ত। আর এই লকডাউনে বহু হাসপাতালে সেই রক্তের ঘাটতি চোখে পড়ছে। তাছাড়া এইধরনের শিবিরে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে ভিন্ন ধর্মের মেলবন্ধন ঘটে থাকে। তাই পরিকল্পনা মাফিক এদিন এই দায়িত্বটা নিয়েই ফেলেন তিনি। মোট ৪৮ জন রক্তদান করেন।
বারুইপুরের নড়িদানা গ্রামে একসময় আতসবাজি তৈরি হত ব্যাপকভাবে। এটি এই এলাকার এক জনপ্রিয় কুটিরশিল্প। কিন্তু বর্তমানে আতসবাজি নিষিদ্ধ। তাই চলতি মরশুমে ওদের ব্যবসায় লেগেছে ভাঁটার টান। জোগাড় হচ্ছে না সংসার খরচের টাকা। সুমিতবাবু কিন্তু সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছিলেন। তাই বিবাহবার্ষিকীতেই চাল, ডাল, ডিম, তেল, সয়াবিন ইত্যাদি নিয়ে হাজির হন ওদের কাছে। এমনকি এক বাজি শ্রমিক মারা যাওয়ার পর তার মেয়ের যাবতীয় পড়াশোনার খরচ স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নেন সুমিত বাবু। বেশকিছু মানুষকে নিয়ে ‘নড়িদানা স্বপ্নসন্ধান’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও গড়েছেন তিনি। শুধু এবছর নয়, প্রতি বছরই এমনভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি। বিবাহবার্ষিকী হোক বা নিজের মেয়ের জন্মদিন, ব্যক্তিগতভাবে দিনটি পালন করতে একেবারেই চান না তিনি। বরং কিছু দুঃস্থের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে সবার একজন করে তুলতে চান।
সমাজের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা,মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী। আর সেই জীবনের বিশেষ দিনগুলোতে, কিছু অসহায়ের মুখের হাসির কারণ হতে পারলে তবেই তো জীবনের সার্থকতা।
Discussion about this post