ওই বুঝি ঢাকে বিসর্জনের বাদ্যি!চোখটা কেমন হালকা ভিজে।মনকে এখন সান্ত্বনা জুগিয়ে চলতে হবে,”আসছে বছর আবার হবে” বলে।”মা গো আর একটা দিন থেকে গেলে হয়না?” ইস বাঙালির এই ইচ্ছে যদি পূর্ণ হত! তবে মা থাকেন। ‘দেবী ভান্ডানি’ রূপে দুগ্গা মায়ের পুজো হয় একাদশীতে!
উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের বেশ কিছু অঞ্চলে রাজবংশী জনজাতি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন দেবী ভান্ডানির পুজো। পুজোকে ঘিরে অনেক গল্পই আছে। যেমনটি হয়ে থাকে। মূল গল্পের সঙ্গে জুড়ে যায় অনেক শাখা প্রশাখা। তবে এলাকাবাসীর বিশ্বাস, দশমীতে উমা ফিরছিলেন কৈলাসে স্বামীর ঘরে। কিন্তু সে তো অরণ্য পথ। হিমালয়ের পাদদেশের তরাই অঞ্চল,বোঝাই যাচ্ছে কতটা গভীর অরণ্য! উমা সেই পথ গুলিয়ে ফেলেছেন। তখন তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। অবিকল ছোট্টো মেয়ের মতো সে কান্না। সেই বনের পথে পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন এক কৃষক দল। বাচ্চা মেয়ের কান্না শুনে তাঁরা দৌড়ে গেলেন, কে কাঁদে জঙ্গলে! মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত হতে বললেন। নিয়ে গেলেন নিজেদের বাড়িতে।খাতির যত্ন করে এগিয়ে দিলেন মেয়েটিকে। তাকে দেখিয়ে দিলেন সঠিক পথ। কিন্তু একী কান্ড! মেয়েটি যে পথ দিয়েই যায় সেখানেই ক্ষেত ভরে যায় সোনার ফসলে! এ যে সাক্ষাৎ দেবী অন্নপূর্ণা! কৃষকরা পুজোর আয়োজন করলেন।
তিনি দ্বিভুজা,ব্যাঘ্রবাহিনী। গাত্রবর্ণ রক্তিম আভাযুক্ত। তাঁর দুই পাশে হাজির চার ছেলে মেয়ে। দেবী ভান্ডানির আশীর্বাদে সে বছর ভরে গিয়েছিল শস্য ভান্ডার। সেই থেকেই নাম ভান্ডানি। কোথাও আবার আলাদা গল্প। তবে,এখানে মনে রাখা উচিত, উত্তরবঙ্গে ঘন। অরণ্যে এক সময় বাঘের সংখ্যা ছিল প্রচুর। বাঘ মানুষে মিলেমিশে থাকত এইসব এলাকায়। তাই কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এলাকায় দেবী দুর্গার পাশে বাঘের উপস্থিতিই খানিক স্বাভাবিক। বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি কিংবা বড়দেবী, সিংহের পাশাপাশি বাঘও দেবীর বাহন। তো যাই হোক, গল্পটি হল এইরকম। কৈলাস ফেরার পথে দেবী একদল রাখাল বালককে ভয় দেখালেন তাঁর বাহন বাঘ দিয়ে। রাখালেরা তাই পুজো শুরু করলেন দেবীর। কৈলাস ফিরে দেবীর শুরু হয় মনখারাপ। এই কাজ করা ঠিক হয়নি তাঁর। তিনি ফিরে যান সেই রাখালদের কাছে লৌকিক দেবী রূপে। তাদের আশীর্বাদ করেন তাদের শস্য ভান্ডার ভরে উঠবে সবুজ ফসলে। সেই থেকেই দেবীর নাম এখানে ভান্ডানি।
তবে মূল কাহিনী যাই হোক,এই পুজোয় মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। শুধু রাজবংশীই নয়, বিভিন্ন জন-জাতির মানুষেরই আরাধ্যা তিনি।পুজোকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও মেলাও বসে। কোথাও কোথাও এখন দেবীর চতুর্ভুজা রূপও বিদ্যমান।আড়ম্বর হয়তো নেই, কিন্তু ভক্তিতে ফাঁক পড়েনা কোথাও। দেবী দুর্গা এইভাবেই ভক্তের মাঝে হাজির বিভিন্ন লৌকিক রূপে।মাকে আরো একটা দিন কাছে পেতে এতেই খুশি ভক্তগণ।
Discussion about this post