বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ গ্রামীণ মেলা। বিভিন্ন পালা-পার্বণকে কেন্দ্র করে বছরজুড়ে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ছোট-বড় গ্রামীণ লোকজ মেলা বসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। তেমনি বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘরের বান্নিমেলা। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা, যা প্রতি বছর ১৪ বৈশাখ তিতাস নদীর পাড়ে বসে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো বান্নিমেলা শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই নয়, দেশের বড় কয়েকটি মেলার মধ্যে একটি।

বৈশাখের শুরু থেকেই এই মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রায় সমস্ত বাড়িতে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। দূর-দুরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসেন। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয় নানা ধরনের পিঠে। ভোর থেকে শুরু হয়ে এ মেলা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মেলায় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এখানে কৃষি পণ্য, মাটির তৈরি খেলনা, হরেক রকমের খাবার সহ ঘরোয়া প্রয়োজনীয় সামগ্রী সবই পাওয়া যায়। এছাড়াও মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল নাগরদোলা এবং পুতুল নাচ।

এই মেলা কীভাবে শুরু হল তা নিয়ে নানা লোকের নানা অভিমত রয়েছে। একটি মতে, মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে নতুন খাজনা আদায় ব্যবস্থার কারণে ১৪ বৈশাখকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্তের মানুষের জমায়েত হত। এই জমায়েতের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরাও পসরা সাজাতে শুরু করেন, যা পরবর্তীকালে মেলায় রূপান্তরিত হয়। আরেকটি মতে, সূদূর অতীতে ধর্মীয় আচার বারুনী স্নানের পর এই মেলা অনুষ্ঠিত হত। যদিও এই মতটি কতটা সঠিক, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে উৎপত্তি যেভাবেই হোক ভাদুঘরের এ বান্নি এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে ভাদুঘরের এই মেলার ঐতিহ্য হারাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এই মেলায় মাটির জিনিসপত্র ছিল মূল আকর্ষণ। কিন্তু তা এখন দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতাদের মতে, প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের কারণে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। গ্রামাঞ্চলের বান্নি মেলা মানেই মাটির জিনিসপত্রের পসরা। কিন্তু আর কয়েক বছর পর মাটির জিনিস বলতে কিছুই থাকবে না বলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ধারণা। তাছাড়াও স্থানীয়দের থেকে জানা যাচ্ছে, গ্রামে নগরায়ণের ফলে মেলার জন্য যে পরিমাণ উন্মুক্ত জায়গা দরকার তা এখন অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে।
চিত্র ঋণ – dainiksarod.com







































Discussion about this post