হালকা, তুলনায় বেশী স্থায়ী এবং কম ক্ষয়িষ্ণু হওয়ায় প্লাস্টিক ব্যবহার বিগত কয়েক দশকে অনেক বেড়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে প্লাস্টিক ব্যবহারের অপকারিতার প্রচার, পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়েছে কী? প্রশ্নটা তো সহজই, উত্তরও সকলের জানা। না, শেষ রক্ষা হয়নি। প্লাস্টিক ইন্ডিয়া স্টাটিস্টিক্সের ২০১৯ সালে দেওয়া তথ্য মতে যত পরিমাণ বর্জ্য প্লাস্টিক তৈরী হচ্ছে,তার মধ্যে পুনর্ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ২০ শতাংশ। এই প্লাস্টিককে রিসাইকল করার গবেষণায় ব্রতী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দেবাশীষ সাউ।
পৃথিবীতে বছরে গড়ে ৩০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়। ভারতে সেই পরিমাণ হল ৫.৫৮ মিলিয়ন টন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বর্জ্য প্লাস্টিক মাটিতে অথবা সমুদ্র, নদী, হ্রদে গিয়ে মেশে। এগুলির মধ্যে কোনো প্লাস্টিক ১৫ বছর, কোনো প্লাস্টিক ৫০ বছর পর গিয়ে ক্ষইতে শুরু করে। প্লাস্টিকের দৈর্ঘ্য যখন ৫ মিলিমিটারেরও কম হয়ে যায়, তখন তাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। এই ক্ষয়প্রক্রিয়া থেকে পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইলস, পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বনস ইত্যাদি দূষক নির্গত হয়। যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পৌষ্টিক ক্ষমতা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস হয়।
গবেষক দেবাশীষ সাউ তাঁর গবেষণার মাধ্যমে চেষ্টা করছেন, কংক্রিটের মধ্যে যদি কিছুটা বর্জ্য প্লাস্টিক ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। WBDST-র আর্থিক আনুকূল্যে দেবাশীষ গত ৩ বছরের বেশি সময় এই গবেষণা চালাচ্ছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে আছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরই প্রফেসর টুম্পা হাজরা ও অমিত শিউলি। পৃথিবীতে প্রতি বছর কংক্রিটের ব্যবহার বাড়ছে। কংক্রিটে ব্যবহৃত স্টোনচিপসের প্রাকৃতিক উৎসের ক্রমসংকোচন ঘটছে, এছাড়া স্টোনচিপস তৈরিতে দূষণও হয়। ফলে, একে প্রতিস্থাপিত করতে পারে এমন বিষয়ের গবেষণা চলছে পৃথিবী জুড়েই।
দেবাশীষ তাঁর গবেষণায় দুই ধরণের প্লাস্টিক ব্যবহার করেছেন। পলিথিলিন এবং পলিথিলিন টেরিথ্যালেট। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্টোনচিপস ২০ শতাংশ অবধি প্লাস্টিক দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলে কংক্রিটের চাপ নেওয়ার ক্ষমতায় হেরফের হচ্ছে না। এই গবেষণার ফলাফল ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জারনাল অফ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। দেবাশীষ জানাচ্ছেন যে, এই ধরণের প্লাস্টিক মিশ্রিত কংক্রিট রাস্তা তৈরী, ব্রীজ তৈরীতে, তাপ ও শব্দ প্রতিরোধী প্রাচীর নির্মাণেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, তাঁর মূল উদ্দেশ্য প্লাস্টিক ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করে তোলা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষন করা।
চিত্রঋণঃ www.euronews.com
Discussion about this post