১৯৮২ সালে বেলুড়ের ইন্দো-জাপান স্টিল কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের মধ্য থেকে কয়েকজন ডাক্তার। হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ১৯৯৬ সালে ইন্দো-জাপান কারখানাটি বন্ধ হয়। তবে বন্ধ হয়নি হাসপাতাল। সেই থেকে প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে শ্রমজীবী হাসপাতাল চিকিৎসা করেছে তিরিশ লক্ষেরও বেশি গরিব মানুষের। ন্যূনতম খরচ এবং এক টাকাও লাভ না রেখে হাসপাতালটি চালানো হয়। বেশির ভাগ চিকিৎসাই হয় সরকারি হাসপাতালের থেকেও কম খরচে। সরকার বা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য নেয়নি শ্রমজীবী হাসপাতাল। ঋণ নেয়নি ব্যাঙ্ক থেকেও। মানুষের শ্রম আর সাহায্য পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে হাসপাতালটি। বেলুড় ছাড়াও সুন্দরবন, হুগলি ও শ্রীরামপুরে কাজ করে চলেছে শ্রমজীবী হাসপাতাল।
বর্তমানে কেবল জায়গার অভাবে শ্রমজীবী হাসপাতালে বহু নতুন বিভাগ খোলা যাচ্ছে না। ইন্দো-জাপান কারখানা এবং গ্র্যান্ড স্মিথি কারখানা বহুদিন আগেই বন্ধ হওয়ায় ওই জমি আইনত সরকারের। শ্রমজীবী হাসপাতাল ২০১০ সালে বাম সরকারের কাছে পরে ২০১১ সালে বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করেছিল ওই সরকারি খাস জমি শ্রমজীবী হাসপাতালকে দেওয়ার জন্য। যেখানে ৩০০ টি বেডের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের সিদ্ধান্ত শ্রমজীবী হাসপাতালের পক্ষে থাকলেও জমি পাওয়া যায়নি। তাই ৯ মার্চ ২০২৪ শনিবার সকাল ১০ টা থেকে বন্ধ কারখানার খাস জমিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের দাবিতে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের সামনে ধর্না শুরু হয়েছে। ধর্নার প্রথম দিনেই যোগ দিয়েছিলেন দুইশোর বেশি মানুষ।
ধর্না মঞ্চে উপস্থিত বিশিষ্ট জনেদের মধ্যে ছিলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জাস্টিস মলয় সেন গুপ্ত, শিক্ষাবিদ মঞ্জু কুমার মজুমদার, অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী, মালদা নদী আন্দোলনের কর্মী গৌতম পাল, মণিপুর পিস মেডিক্যাল মিশন থেকে বিপ্লব ভট্টাচার্য, দিশা পরিবেশ সংগঠনের তরফ থেকে সেলিম মল্লিক প্রমুখ। ভারতীয় আইনজীবী এ্যাসোশিয়েশন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ, হকার্স সংগ্রাম কমিটি, সেভ ট্রি সেভ ওয়ার্ল্ড, সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল, হরিপাল শ্রমজীবী হাসপাতাল, চুঁচুড়া শ্রমজীবী হাসপাতাল প্রভৃতি সারা রাজ্যের আরও অসংখ্য সংগঠন এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের সহ সম্পাদক গৌতম সরকারের সঙ্গে ডেইলি নিউজ রিল এই বিষয়ে কথা বলেছিল। তিনি জানালেন, “আমাদের দাবি এমন কিছু নতুন নয়, বরং বহু বছর ধরে চলছে। এই বিশাল জমি যে সরকারি খাস জমি, তাও আইনত স্বীকৃত এবং যেকোনো খাস জমিই সরকারকে জনকল্যাণমূলক কাজেই দিতে হয় এও আইনত স্বীকৃত। ফলে সরকারের উচিৎ অবিলম্বে এই জমি আমাদের দেওয়া। তাহলে আমরা ৩০০ বেডের হাসপাতাল, প্যারামেডিক্যাল কলেজ, চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করার কাজ এগোতে পারি।’’
Discussion about this post