আড়াইশো বছরের পুরনো বাংলাদেশের পুজোটি আজ হয় দক্ষিণ কলকাতার বুকে। বদলায়নি উদ্যোক্তা পরিবারগুলি। বদলায়নি রীতি নীতি। বদলায়নি মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাস। বদলেছে শুধু ভূগোল! যাদবপুর শ্রী কলোনির বারো ভূতের পুজো, পুজোর মন্দির আর বারো ভূতের মেলা বয়ে নিয়ে চলেছে মানুষের ইতিহাস, দেশভাগের ইতিহাস।

১৯৫০ সাল থেকে এই যাদবপুর অঞ্চলে বারো ভূতের পুজো হয়ে আসছে। বহু আগে থেকে যে পুজো হত বাংলাদেশে। পাঁচের দশকেই শ্রীকলোনি তে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বারো ভূতের মন্দিরটিও। প্রতিবছর এই পুজো উপলক্ষে পৌষ সংক্রান্তির সময় ‘বারো ভূতের মেলা’ও হয়ে থাকে। মন্দির কমিটিই এই মেলার উদ্যোক্তা। এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে ইতিহাস। মন্দির আসলে ছিল বাংলাদেশের ঢাকা শহর থেকে আট মাইল দূরে রুহিতপুর গ্রামে। শোনা যায় দেশভাগের পর রুহিতপুর গ্রামের মানুষ মন্দিরের সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে আসেন ভারতে। তাঁরা আশ্রয় নেন এই যাদবপুর অঞ্চলে। বর্তমানে এই অঞ্চলের অধিকাংশই কলোনি এলাকা। বাংলাদেশে যে পরিবারগুলি এই পুজো করতেন, ভারতে এসেও তাঁরা প্রায় সকলে একই অঞ্চলে আশ্রয় নিলেন এবং পুজো বন্ধ হল না। আজও বংশানুক্রমে চলছে সেই ধারা।

এখন, এই বারোভূতের নাম শুনলেই মানুষের মাথায় আসতে পারে বারোখানা ভূতের নাচন কোঁদনের ছবি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এই ভূত আসলে কিন্তু ভূত নয়। বরং ভগবান। বিষ্ণুর বারোটি অবতারকেই বারো ভূত বলা হয়েছে এখানে। আড়াইশ বছর ধরেই তাই-ই বলা হয়ে এসেছে। আজও এই বারো ভূতের পুজো হয়ে চলেছে ধূমধামের সঙ্গে। মেলার আয়োজনও নেহাত কম নয়। ভিন রাজ্যের সাধু সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ অংশ নেন এই বিরাট দক্ষযজ্ঞে। মেলার মাঠটিও সাধারণের কাছে সুপরিচিত বারো ভূতের মাঠ বলেই।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – বঙ্গ ভিটা
Discussion about this post