“আমরা দু’টি ভাই/ শিবের গাজন গাই।” ফুল-ফল, নীল ও চড়ক—এই নিয়ে গাজন। সঙ্গে শৈব সন্ন্যাসীদের কৃচ্ছসাধন। কোথাও পাঁচদিন, কোথাও সাতদিন ধরে চলে গাজন উৎসব। চড়ক গাছ নামে একটা বিশেষ গাছ ডুবিয়ে রাখা হয় গ্রামের শিবমন্দির লাগোয়া কোনও পুকুরে। গাজনের দিন সেটি তুলে এনে মাটিতে স্থাপন করা হয়। গাছটি আসলে শিবের প্রতীক। আর ভূমি হল পার্বতী। গাজন শিব-পার্বতীর মিলনের উৎসব। তবে জেলা বিশেষে চড়ক পুজোর রীতি, নিয়ম-কানুনের তারতম্য রয়েছে।
বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে গাজনের নিয়মও যেমন বিভিন্ন, তেমন তার ভিন্ন ইতিহাস ও আছে। বাঁকুড়ার সিমলাপাল থানার দুবরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাঁশীপুর গ্রাম। সেই গ্রামে একটি ছোট্ট জলাশয়ের ভিতরে শিব লিঙ্গ বিরাজমান। এই শিবের পুরোহিত তপশীলি জাতিভুক্ত লোহার সম্প্রদায়ের। বানেশ্বরের মূর্তিটি ১৫ ফুট ব্যাসার্ধের একটি জলাশয়ে প্রতিষ্ঠিত, যার গভীরতা প্রায় ২৫ ফুট। শিলাবতী নদীর কাছাকাছি এই জলাশয়টি অবস্থিত, ফলে সারা বছর বানেশ্বর জলের তলায় ডুবে থাকেন। বলা হয়ে থাকে অতি প্রাচীনকালে শিলাবতী নদীতে কোন এক সময়প্রবল বন্যায় ভেসে এসেছিল এই মূর্তি। এই কারণেই নাম বানেশ্বর।
মন্দিরের এক পুরোহিত জানান, এই জলাশয়টি জলশূন্য করার কাজ শুরু হয় প্রতিবছর চৈত্র মাসের ২০ তারিখে। কলসি করে জল শূন্য করার রীতি আছে। এই কাজে পাশাপাশি সকল গ্রামের মানুষ হাত লাগান। প্রতি দিন জল শূন্য করতে হয় এবং সারা বৈশাখ মাস প্রতিদিন পুজো হয়। আশ্চর্যের বিষয় বৈশাখ মাসে খুব একটা বেশি জল ভর্তি হয় না। বৈশাখ সংক্রান্তির পুজো শেষ হওয়া মাত্রই জলাশয়টি জলে পূর্ণ হয়ে যায়। পুজো উপলক্ষে চৈত্র সংক্রান্তির দিন মেলা বসে। গত ১৫-২০ বছর ধরে মেলা কমিটি থেকে ২৪ প্রহরেরও আসর বসানো হয়। একদিনের এই মেলাকে কেন্দ্র করেই মানুষজন আনন্দে মেতে ওঠে।
Discussion about this post