হরিপাল ব্লকের অন্তর্গত বন্দীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র! তবে তাঁর দুর্দশার ঐতিহ্য তিন দশক প্রাচীন। এই দুর্দশার কাহিনীর পরতে পরতে লেগে রয়েছে নতুনত্ব। সরকারী ওয়েবসাইটে লেখা, এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০ টি বেডের ইন্ডোর বিভাগ চালু রয়েছে। এদিকে ৩০ বছর ধরে বন্ধ ইন্ডোর বিভাগ! তাই হকের দাবি ছিনিয়ে নিতে লড়াইয়ে নেমেছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। তবে এই লড়াই কোন রাজনৈতিক দল নয়, শুরু করেছেন এলাকার মানুষরাই। এলাকার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। জরুরী পরিষেবায় মাত্র একটি ওপিডি বিভাগ খোলা। অথচ প্রতিদিন যেখানে চিকিৎসা করতে যান প্রায় কয়েকশো মানুষ। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন এখান থেকে। অথচ আজ প্রায় তিরিশ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে ইন্ডোর বিভাগ। এখানে একসময় চালু ছিল প্রসূতি বিভাগও। প্রায় কুড়ি কোটি টাকা খরচ করে বারো বছর ধরে তৈরী হয়ে পড়ে রয়েছে বিল্ডিং, পাঁচ বছর ধরে পড়ে রয়েছে অর্ধেক তৈরী পাঁচিল । তৈরী হয়েছে মেল-ফিমেল বিভাগ, কোয়ার্টার, রয়েছে জলের লাইনও। কিন্তু কোন অজানা কারণে, এই সবকিছুই বন্ধ।
প্রতিবেশী গ্রামের প্রচুর মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন। কিছুদিন আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন এক ব্যক্তি। স্থানীয় পরিষেবা না পেয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে চুঁচুড়ায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে রাস্তায় প্রাণ হারালেন। জানা গিয়েছে শুধুমাত্র সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার জন্য সাপের কামড়ে অঘোরে মারা গিয়েছে একটি ছোট্ট শিশু। প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে মায়েদের যেতে হচ্ছে হরিপাল অথবা চুঁচুড়া হসপিটাল। নূর ইসলামের কথায়, “এরকম করোনার মহামারী সময়ে মাত্র তিনদিন খোলা থাকছে আউট ডোর বিভাগ। এখন চিকিৎসকও আসছেন না প্রায়ই। আমরা কি বিপদে তাহলে নূন্যতম চিকিৎসাটুকুও পাবো না?” আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সমীরণ রায় তুলে ধরলেন অন্য একটি দিক। তিনি বলেন, “এই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু হলে উপকৃত হবে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ। এমনকি মহামারীকালে, যদি এটিকে প্রশাসন এটিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবেও চালু করে তাহলেও আমরা পাশে আছি। এলাকার প্রচুর মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা পাবে। এই আবেদনেই তাই আমরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবেই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করব।”
এই স্থানীয় সূত্রের খবর, আশেপাশের গ্রামের প্রচুর মানুষ এই আবেদনপত্রের স্বাক্ষর করতে আগ্রহী। চিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারানোর দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর কেউ দেখতে চান না। এই কর্মসূচির সফলতার ওপর নির্ভর করছে হাজার হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ। প্রশাসনের দরজায় এক অত্যন্ত মর্মস্পর্শী আবেদন নিয়ে আজ তাঁরা দাঁড়িয়ে। সত্যিই কি এই হাসপাতাল সচল হয়ে উপকৃত হবেন এই অসহায় মানুষেরা? নাকি ফাইলবন্দি হয়ে কোন সরকারী টেবিলের কোণায় পড়ে থাকবে তাদের চিকিৎসার পাওয়ার মৌলিক অধিকার! সাধারণ গ্রামবাসীদের লড়াই বেঁচে থাকার সেই মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে আনতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার বিষয়।
Discussion about this post