অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ যে একবার পেয়েছে, তাকে আর পায় কে! ঘর ছেড়ে বিবাগী না হলেও, বাইরের টান এড়ানো যায় না একেবারেই। তবে অ্যাডভেঞ্চার শুনলেই মনে হয় রহস্য রোমাঞ্চের কথা। কিন্তু তা ছেড়ে এবার ভাবনাটা একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলে কেমন হয়? যেমন সাইক্লিং, এখন নতুন কিছু নয় ঠিকই। তবে নতুন করে জয়ের আনন্দ সব সময়ে নতুন।
অ্যাডভেঞ্চারের নতুন ধারায় স্নাত হতে বেরিয়ে পড়েছিলেন অভিষেক তুঙ্গা। দোসর জুটেছে সাইকেল। ২০০ কিমি, ৩০০ কিমি থেকে ৬০০ কিমির বি.আরএম আগেই পূর্ণ হয়েছিলো তার। তবে এবার টার্গেট ছিল কলকাতা থেকে পুরী। যাওয়া আসা মিলে ১০৫৫ কিমি। আর তাও মাত্র ৭৫ ঘন্টায়। এটি মূলতঃ সেল্ফ সাপোর্টেড লং ডিসটেন্স সাইক্লিং ইভেন্ট। যা পরিচালিত হয় শতাব্দী প্রাচীন অডেক্স ক্লাব অফ প্যারিসের তত্ত্বাবধানে। তবে কলকাতায় এটি পরিচালনা করে সাইকেল নেটওয়ার্ক ক্লাব। ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঠিক সকাল সাতটায় সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে ইভেন্ট শুরু হয়।
যাদবপুর থেকে ইতিমধ্যেই সল্টলেক আসতে তাকে পেরোতে হয়েছে ১৬ কিমি পথ। স্পিড ধরে নিয়ে এগোতে শুরু করলেন অভিষেক তুঙ্গ। পথে ধীরে ধীরে সঙ্গ দিল টিমের বাকিরা। সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। রোদের সেদিন ছুটি। দক্ষিণী হাওয়া কাটিয়ে তাদের যাত্রা দক্ষিণ-পশ্চিম অভিমুখে। যাত্রা শেষের উদ্দেশ্যে প্রায় উড়ে চলেছে সাইকেল। তারই মাঝে কেটে গেছে কুয়াশা মাখা ভোর। কেটে গেছে খিদে মিটিয়ে দোকানেই ঘুমের রাত।
তবে ক্লান্তি, ঘুম সব ভুলে এবার গন্তব্য। এরই মাঝে অভিষেকের দুই সঙ্গী তাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছে বেশ কিছুটা। তবে পাহাড় চড়া অভিষেকও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। সে স্পিড বুঝে সব ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে বাকিরা পিছিয়ে। রাত ঠিক ১২ টা ৫৩। সময় ৬৫ ঘন্টা ৫৩ মিনিট। গন্তব্য প্রাণের কাছে। অবিরাম প্যাডেলে লিখিত হলো ১০০০ কিমি কলকাতা বিআরএম-এর রেকর্ড। তিনি বলেছেন, “এর পর ইচ্ছে আরও বেড়ে গেলো, টার্গেট আরও বাড়বে।” মাঝে কেটে গেছে দুটো সূর্যোদয়, তিনটি সূর্যাস্ত। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডাক এসে পৌঁছেছে দোরগোড়ায়। আর নতুন স্বপ্নের উচ্ছ্বাস অভিষেক তুঙ্গর মনে। হাল না ছাড়া মানুষদের জয় বোধহয় এভাবেই সম্ভব।
Discussion about this post