এই বিশাল পৃথিবীতে এমন অনেক মন্দির আছে যা নিজের সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু ভারতে এমন এক মন্দির রয়েছে যা প্রায় কোটি কোটি বছর ধরে তার সৌন্দর্য্যের আড়ালে এক অজানা রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। মন্দিরটি হল ঔরঙ্গাবাদের কৈলাশ মন্দির। এটি একটি রহস্যময় শিব মন্দির। এই কৈলাশ মন্দির মহারাষ্ট্র জেলার বিখ্যাত ইলোরা গুহার মধ্যে অবস্থিত। ইলোরা গুহাকে পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন গুহা বলে মনে করা হয়। এখানেই পাথর কেটে কেটে গুহা ও শিব মন্দির তৈরী করা হয়েছে। কৈলাশ মন্দির অন্যান্য মন্দিরের মতো বহু পাথরের টুকরো কেটে বা জুড়ে তৈরী করা হয়নি। বরং এটি বানানো হয়েছে একটি মাত্র পাথর কেটে। এই ধরণের মন্দির তৈরী করা আজকের উন্নত বিজ্ঞানের যুগেও প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। কিছু বিজ্ঞানী এটাকে ১৯০০ বছরের পুরোনো মনে করেন। আবার কেউ কেউ ৬০০০ বছরের পুরোনো বলেও মনে করে থাকেন। তবে আসলে মন্দিরটি যে কতদিনের পুরোনো আর কীভাবে তৈরী করা সম্ভব হল, তা আজ অবধি জানা যায় নি।
পৃথিবীর যে কোনো গুহা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেগুলি বাইরের দিক থেকে ভিতরের দিকে কাটা হয়েছে। যাকে ‘কাটিং মনোলিক পদ্ধতি’ বলা হয়। কিন্তু কৈলাশ মন্দিরটি তৈরী করা হয়েছে ওপরের দিক নিচের দিকে। এই মন্দিরের কারুকার্য দেখলে বোঝা যায়, এই মন্দির বানানোর জন্য অনেক পাথর কেটে সরাতে হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান প্রায় ৪ লক্ষ টন পাথর কেটে সরাতে হয়েছে। ইতিহাস বলছে এই মন্দির বানাতে প্রায় ১৮ বছর সময় লেগেছিল। যদি ধরে নেওয়া যায় মন্দির বানাতে শ্রমিকেরা রোজ ১২ ঘন্টা করে কাজ করেছিল, তাহলেও ১৮ বছরের মধ্যে ৪ লক্ষ টন পাথর কেটে সরানো প্রায় অসম্ভবই। শুধুমাত্র কিছু পাথর কাটার যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই ধরণের মন্দির তৈরী করাটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। যদি সেই সময়ের মানুষে পাথরের তৈরী যন্ত্রপাতির সাহায্যে মন্দিরটি বানিয়ে থাকেন তাহলেও মন্দিরটি তৈরী করতে কয়েক লক্ষ বছর সময় লাগার কথা। সব থেকে আশ্চর্য ব্যাপার, যে পাহাড় কেটে মন্দিরটি বানানো হল আশেপাশে তার অবশেষের দেখা মেলে না। এমন কি কয়েকশো মাইলের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই সময় যখন ক্রেনের মতো আধুনিক যন্ত্র ছিল না। এত পরিমাণ পাথর কাটা ও তা মন্দির স্থল থেকে সরানো কীভাবে সম্ভব হয়েছিল তা আজও অজানা।
এছাড়াও মন্দিরের আকৃতি, ভাস্কর্য্য এবং ভেতরের ভবন এটিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। এই মন্দিরে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার জন্য ভূমিগত নালারও ব্যবস্থা দেখা যায়। মন্দিরের ছাদ, সিঁড়ি ও থাম এতটাই নিখুঁত ভাবে তৈরী যা দেখে সন্দেহ হবে যে সত্যিই কোনও মানুষের বানানো কিনা! শোনা যায়, ১৬৮২ সালে তৎকালীন মুঘল বাদশা ঔরঙ্গজেব মন্দিরটি ভেঙ্গে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য এক হাজার সৈন্যের একটি দল পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সৈন্যদল তিন বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েও মন্দিরটি নষ্ট করতে পারেনি। এই মন্দিরে আরও রহস্য লুকিয়ে। ১৮৭৬ সালে ইংল্যান্ডের ইমান হেনরিক একটি বই লিখেছিলেন। তিনি কৈলাশ মন্দিরের গুহাটি পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি এমন এক ব্রিটিশ লোকের দেখা পান যিনি এই গুহার নিচে গিয়েছিলেন। সেই ব্রিটিশ লোকটি তাঁকে বলেছিলেন যে, যখন তিনি সেই সংকীর্ণ গুহার মধ্যে গিয়েছিলেন সেখানে তিনি একটি মন্দির দেখতে পান। সেখানে সাতজন লোকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। সেই সাতজন লোকের মধ্যে একজনকে পুরোপুরি অন্য রকম মনে হয়েছিল। তাকে একবার দেখা যাচ্ছিল আবার পরক্ষণেই নাকি সে হারিয়ে যাচ্ছিল। এই বইটি প্রকাশের পরে অনেক বিজ্ঞানী সেই গুহাটির খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারপর সরকার থেকে সেই গুহাটি পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আজকের দিনে এই ধরণের মন্দির তৈরী করতে অনেক কম্পিউটার, হাজার ড্রইং ও বহু ছোট ছোট মডেল বানিয়ে পরিকল্পনা করতে হত। কিন্তু সেইসময় এসব প্ৰযুক্তি ছাড়াই এই মন্দির বানানো কী করে সম্ভব হল তার উত্তর জানা নেই। আজকের সমস্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এই ধরণের দ্বিতীয় আর একটি মন্দির বানানো একেবারেই অসম্ভব। এনসিয়েন্ট এস্টোনট থিয়োরী অনুযায়ী এই মন্দিরের নির্মাণ এলিয়েন্ট পদ্ধতিতে হয়েছিল। তাই একথা স্বীকার করতেই হবে যে সেই সময়ের প্রযুক্তি ব্যবস্থা হাল আমলের থেকে অনেক বেশি উন্নত ছিল। ঔরঙ্গাবাদের কৈলাশ মন্দিরও এমন এক সভ্যতার মানুষ বানিয়েছিলেন যা আজকের সভ্যতার চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ছিল।
Discussion about this post