দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকার জন্য মঙ্গলবারের দিনটা ছিল যেন এক বিভীষিকার মতো। দীর্ঘ ৩৫ বছর যেটা দেখেনি কাশ্মীর, সেটা এদিন ঘটলো কাশ্মীরের পহেলগাঁও উপত্যকায়। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে পরিবারকে নিয়ে একটা ভালো সময় কাটাচ্ছিলেন পর্যটকরা। অতর্কিতে ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে সেই পর্যটকদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল জঙ্গিরা। নাম ধরে ধরে নিরস্ত্র হিন্দু পর্যটকদের হত্যা করলো জঙ্গিরা। জঙ্গিদের একে-৪৭ এর প্রতিটা গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিলো কাশ্মীরের শান্তিকে। আর সেই পরিস্থিতির মধ্যেই নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের বাঁচাতে ছুটে এলেন এক অতি সাধারণ কাশ্মীরি মুসলিম যুবক। নাম সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। পেশায় একজন সাধারণ টাট্টু ঘোড়া চালক। হাতে কোনো অস্ত্র না নিয়েই লড়ে গেলেন জঙ্গিদের সঙ্গে। তিনি জানতেন মৃত্যু নিশ্চিত, কিন্তু তবুও নিজের পেশাকে ভালোবেসে, ভগবানস্বরূপ পর্যটকদের বাঁচাতে পরিবারের কথা না ভেবে নিজের জীবনটাই শেষ করে দিলেন আদিল।
জানা যায়, ওই বন্দুকধারীদের মধ্যে একজনের হাত থেকে অস্ত্র কাড়ার চেষ্টা করেন আদিল। কিন্তু, সেই চেষ্টা বিফলে যায়। বরং আদিলের সাহসকে উপেক্ষা করে গর্জে ওঠে জঙ্গির বন্দুক। মুহূর্তেই ঝাঁঝরা হয়ে যায় আদিলের শরীর। ঘটনাস্থলেই থেমে যায় এক সাহসী হৃদয়ের স্পন্দন। আদিলের মৃত্যু কেবল একটি প্রাণহানি নয়, একটি পরিবার ভেঙে যাওয়ার অনতিক্রম্য শুরু। বৃদ্ধ পিতা-মাতা, স্ত্রীর হতবিহ্বলতা, আর দুই শিশুর চোখে প্রশ্ন—“আমাদের অপরাধ কী?” ওই রাতেই বহুবার ফোন করেছিলেন তাঁরা আদিলকে, কিন্তু ওপার থেকে কোনো সাড়া আসেনি। পরদিন থানায় গিয়ে জানতে পারেন—তাঁদের ছেলে আর কখনও ফোন ধরবে না।
এই নির্মম হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৬ জন নিরীহ পর্যটক, যাঁদের মধ্যে তিনজন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের। আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়ে শয্যাশায়ী। পাকিস্তান-প্রণোদিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা’র ছায়া সংগঠন দ্যা রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট ওরফে টিআরএফ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। হয়তো আর কয়েকদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের এই জঙ্গি সংগঠনের উপরে আক্রমণ শানাবে ভারতীয় সেনা ও আধা সেনা। কিন্তু, সেই পহেলগাঁও কি আর আগের মত হবে? আপনি কি কাশ্মীরের প্রতি সেই বিশ্বাসটা আর দেখাতে পারবেন? ভারতীয় কিংবা বিদেশি পর্যটকদের ট্যুর তালিকায় কাশ্মীর কি আর সহজে নিজের পুরোনো স্থান ফিরে পাবে? ২০১৯ সালে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসবে। ভারত সন্ত্রাসবাদকে পুরোপুরি শেষ করবে। কিন্তু, মঙ্গলবারের ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে, কাশ্মীর এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই কাশ্মীরেই, যেখানে এখনো সন্ত্রাসবাদটাই রোজনামচা।
Discussion about this post