লৈঙ্গিক সমতা বলতে কোনও ব্যক্তির লিঙ্গ নির্বিশেষে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পদ, সুযোগ ও সুরক্ষা লাভ করা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যাপারে সমান অধিকারকে বোঝায়। তবে তার মানে এই নয় যে পুরুষ ও নারী হুবহু একই ধরনের ব্যক্তি কিংবা তাদের সাথে সম্পূর্ণ একইভাবে ব্যবহার করতে হবে। লৈঙ্গিক বৈষম্য বিশ্বের সমস্ত সমাজেই প্রচলিত এবং এর বহিঃপ্রকাশ বহুমাত্রিক। চাকুরির অভিজ্ঞতা, শিক্ষার সুযোগ বা স্বাস্থ্য, সব ক্ষেত্রেই এটি দেখা যেতে পারে। তবে জানেন কি দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশেষ করে সুবর্ণরেখার উভয় তীরে পালিত হয় ‘আভড়াপুণেই’ বা অব্যূঢ়া পূর্ণিমা। এই উৎসব অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের জন্য। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন এই উৎসবে মা,ঠাকুমা,দিদিমারা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের মঙ্গল কামনা করেন। তাঁদের অবিবাহিত সন্তানরা যাতে ভবিষ্যৎ এ ভালো জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গীনী পায় সেই কামনা করা হয়।এদিন বাড়িতে পিঠে,পায়েস, লুচি, সুজি, ক্ষীরি থেকে শুরু করে নানা নিরামিষ পদ তৈরী হয়। এদিন সারাদিন অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের ‘ভুজা’ বা মুড়ি খাওয়া বারণ। মুড়ি খেলে এই ব্রত ‘বুড়ি যাওয়া’র (ভেঙে যাওয়ার) ভয় থাকে।
ব্রত শেষে আজকাল তুলসী গাছে জল ঢালার রীতি প্রায় হারিয়ে গেছে।এই উৎসবে ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে সমান। স্নানের পরে মায়েরা অবিবাহিত সন্তানের মঙ্গল কামনায় কপালে চন্দনের মঙ্গল টীকা পরিরে দেন। অনেক অবিবাহিত ছেলেমেয়েরা ,যাদের বয়স একটু বেশি তারা অনেক ক্ষেত্রে নিজের ভবিষ্যৎ জীবনে কার্তিকের মতো স্বামী বা লক্ষ্মী প্রতিমার মতো স্ত্রী পাওয়ার লক্ষ্যে সরাদিন উপবাস রেখে ব্রত করেন।
মা-দিদিমা এই লৌকিক উৎসবের সময় অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের আশীর্বাদ করে বলতেন, “পো মেনেকার নিশ বাঢ়ু” অর্থাৎ ছেলেদের গোঁফ বাড়ুক ,আর বলতেন ‘ঝি মেনেকার আইস বাঢ়ু’ অর্থাৎ মেয়েদের আয়ু বাড়ুক। আজকের আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায় আভড়াপুনেইয়ের জৌলুস বা আচার অনেকটা ফিকে। নিজের যোগ্যতায় নারীরা পুরুষের সঙ্গে নির্মাণ করছে সমতার সমাজ৷ সমতার সমাজ আমাদের নিয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী মানবিক পৃথিবী নির্মাণের দিকে৷ এই শুভ বার্তার পুণ্য বাণী যেন বহন করে চলছে আভড়াপুনেই উৎসব।
চিত্র ঋণ – সুদীপ কুমার খাঁড়া
Discussion about this post