শীত আমাদের প্রিয় সময় কেন? ভাবলে দেখবেন, এই শীতের সাথেই কিন্তু ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে বাঙালির বেশ কিছু আবেগ! কমলালেবু থেকে পিঠে পুলি, পৌষ সংক্রান্তি থেকে সরস্বতী পুজো – সব এই ঋতুরই অঙ্গ। তবে যে না থাকলে এই শীতের আমেজ ফিকেই হয়ে যেত, তাকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ না জানালেই নয়! ঠিক ধরেছেন, সে হল বাদামি বর্ণের মনমাতানো গন্ধের নলেন গুড়! আর নলেন গুড়ের কথা উঠলেই সবার আগে মাথায় আসে বাংলাদেশের যশোরের ‘জলযোগ’-এর নাম!
যশোরের রেল রোডের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান ‘জলযোগ’। এখানকার প্রধান আকর্ষণ নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরি হচ্ছে গত ১২৬ বছর ধরে। দুধের ছানার সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে তৈরি হয় গোলাকৃতি এই সন্দেশ। বিশদে বললে, পাঁচ কেজি দুধ দিয়ে প্রথমে তৈরী হয় এক কেজি ছানা। তারপর ওই ছানার সাথে পরিমাণ মত নলেন গুড় ও চিনি মিশিয়ে এক কেজি একশো গ্রাম ওজনের সন্দেশ তৈরি করা হয়। এত বছর পরেও সেই সন্দেশ একইভাবে ভোজনরসিকদের জিভে জল আনতে সক্ষম!
তবে জানেন কি, ঐতিহ্যবাহী নলেন গুড়ের সন্দেশের জন্ম কার হাতে? মিষ্টির জগতে যে নামটি শুনলে আপামর বাঙালি যারপরনাই আনন্দিত হন, সেই ভীম নাগের হাতে! হ্যাঁ, ১৮০০ সালের দিকে অবিভক্ত বাংলার কলকাতা শহরের ভীমনাগই প্রথম যশোর থেকে নলেন গুড় এনে সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ভীম নাগের এই সন্দেশ কলকাতার মিষ্টিপ্রেমীদের প্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ১৮৯৫ সালে যশোরে কালীপদ বিশ্বাস ‘জলযোগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর হাতের নলেন পাটালির সন্দেশও মানুষের মন জয় করে। তারপর তাঁর ছেলে অজিত বিশ্বাস যোগ্য হাতে এই সন্দেশের গুণমান ধরে রেখেছেন। দোকানের বর্তমান মালিক তাঁর পুত্র সাধন বিশ্বাস।
এই দোকানে প্রতিদিন শুধু সন্দেশই বিক্রি হয় প্রায় দুই মণ। তবে শুধু বাংলাদেশই না, দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর সময় এপার বাংলার মধ্যমগ্রাম, অশোকনগর, দত্তপুকুর, হাবড়া, কৃষ্ণনগর, বসিরহাট, চন্দননগর, বনগাঁ থেকেও সন্দেশের অর্ডার আসে জলযোগে! উৎসবের মরশুমে সন্দেশ বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ৫-৬ মণ। বোঝাই যাচ্ছে, যশোরের জলযোগের নলেন গুড়ের সন্দেশ শতাধিক বছর ধরে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে কতখানি সফল!
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – মহঃ সাইফুল ইসলাম
Discussion about this post