আমাদের দেশে যোগাযোগের রয়েছে নানা মাধ্যম। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম বোধহয় রেল। কাছে হোক কিংবা দূরে সবজায়গায় আপনাকে পৌঁছে দেবে এই রেলপথ। আর এই রেলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এতে যাত্রার খরচ সব শ্রেণীর মানুষের সাধ্যের মধ্যে। তার একমাত্র কারণ হল এই রেলপথ হল ভারত সরকারের অধীনে। তবে জানলে অবাক হবেন ভারতের সব রেলপথ ভারতীয় সরকারের হলেও একটা মাত্র রেলপথ ছিল ব্যাতিক্রম। ২০১৬ সাল পর্যন্ত সেই রেল যাত্রা করলেও তা ভারতীয় রেলের অধীনস্থ ছিলনা। কেন তা অধীনস্থ ছিলনা? কী তার ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু বছর।
সালটা ১৯০৩। ভারতে তখন ব্রিটিশ রাজ চলছে পুরোদস্তুর। ব্রিটিশ সংস্থা ক্লিক নিক্সন ভারতে এক রেলপথ স্থাপন করে। সেই ন্যারোগেজ রেলপথটি ছিল অমরাবতী থেকে মর্তুজাপুর পর্যন্ত। যা তৈরী করতেও কোম্পানীর লেগেছিল অনেকটা সময়। প্রায় ১৩ বছর। তবে এই ১৮৯ কিমি দীর্ঘ রেলপথটি ভারতীয়দের স্বার্থে বানিয়েছিল তেমনটা ভাবলে ভুল ভাবা হবে। আসলে এর পিছনেও আছে অন্য এক গল্প। সেই সময়ে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে ভারতের অমরাবতী ছিল কার্পাস তুলোর জন্য বিখ্যাত। আর এই তুলোর চাহিদাও ছিল অখণ্ড ভারতের সর্বত্র এবং বাইরেও। তবে সড়ক পথে এই তুলো আনতে সময় লেগে যেত অনেকটা। ব্রিটিশরা ভারতে শাসন করলেও আদতে তো ছিল তারা ব্যবসায়ী। তাই নিজেদের ব্যাবসায়িক স্বার্থ তারা বুঝতে ভালো মতোই। আর সেই স্বার্থ চরিতার্থ করতেই তারা গড়ে তুলেছিল এই রেলপথটি। যা মুম্বাই বন্দরে তুলা আনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত।
মজার বিষয় হল ১৮৯ কিমি দীর্ঘ রেলপথটি র মধ্যে ছোট বড়ো ১৭টি স্টেশন পড়লেও ট্রেন কিন্তু চলত একটাই। যার নাম শকুন্তলা এক্সপ্রেস। দীর্ঘ এই পথে কেবল ‘শকুন্তলা’রই আনাগোনা তাই এই রুটটি সাধারণ মানুষের কাছে শকুন্তলা রুট নামেই পরিচিত। বহুবছর আগেই ভারতে শুরু হয়েছিল ডিজেল ইঞ্জিনের ব্যাবহার। তবু ১৯৯৪ সালের আগে পর্যন্ত কিন্তু এই রুটে ছিল বস্পচালিত রেল ইঞ্জিনের রাজত্ব। স্বাধীনতার পর এই ১০০বছরের পুরনো ট্রেনটিই ছিল বহু মানুষেরই ছিল ভরসা। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক মানুষ যাতায়াত করতেন এই ৫ কামরার ছোট্ট ট্রেনটিতে।
তবে ভারতের স্বাধীনতার পর সেই ব্রিটিশ কোম্পানী ভারতীয় কোম্পানীতে রুপান্তরিত হয়। ১৯৫১ সালে আমাদের দেশে রেলপথের জাতীয়করণ হয়েছিল। কিন্তু তখন এই রেলপথটি কিন্তু নিক্সন কোম্পানীর অধীনেই থেকে যায়। এই রেলপথের পরিবর্তে ক্লিক নিক্সন সংস্থা সরকারের কাছ থেকে পেত বেশ কিছু অর্থ। তাহলে সেই হিসাব মত এই রেল তথা রেলপথটির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব বর্তায় ওই কোম্পানীর ওপর। কিন্তু এত কর নেওয়ার পরও তারা রক্ষণাবেক্ষন বা উন্নতির উদ্দেশ্যের কোন ব্যাবস্থায় নেয়নি সেই কোম্পানী। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে এর গতি ঘণ্টায় মাত্র ২০ কিমি। খুবই দুঃখের বিষয় যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলপথটির এমনই হাল হয়েছিল যে ২০১৬ সালে সেটিকে বন্ধ করে দিতে হয়। কেবল অবহেলার জন্য এই ঐতিহ্যবাহী ট্রেন বন্ধ হয়ে যাবে এটা সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না। আশা রাখি ভারত সরকার ভবিষ্যতে এই রেলটি আবারও চালানোর উদ্যোগ নেবে এবং শকুন্তলা এক্সপ্রেসও ফিরে পাবে তার পুরনো মহিমাকে।
চিত্র ঋণ – the lallantop.com
Discussion about this post