লকডাউন, কর্মহীনতা, মূল্যবৃদ্ধি সব মিলিয়ে সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না সাধারণ মানুষের। কো-১৯ এর একের পর এক ঢেউ যেন সঙ্গে দোসর। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী লকডাউনে ভারতবর্ষে ৪৫ শতাংশেরও বেশি মানুষের আয় কমেছে আগের তুলনায়। এসবে কান গেলে মনটা এমনিই দুঃশ্চিন্তায় ডুবে যায়। তবে আঁধারেও আছে আলোর উৎস। এবার মশাল হাতে এই আলোর সন্ধান দিয়েছে মুর্শিদাবাদের অর্কিড ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
১ সেপ্টেম্বর অর্কিড ফাউন্ডেশনের আয়োজনে, আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ভরতপুর-২ তথা সালার ব্লকে জ্বলল আশার আলো। ৭ টি অঞ্চলের ২৮ টি গ্রামের মোট ২০০০ দুঃস্থ পরিবারকে ৩৬ লক্ষ টাকা মূল্যের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এদিন অর্কিড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সোহেল রানা আলম জানান, তারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। দুর্গা পুজোয় বস্ত্র বিতরণের পাশাপাশি, ইয়াস দুর্যোগে সাহায্য, সাধারণ মানুষদের খাদ্য সামগ্রী থেকে মাস্ক বিতরণ, সর্বত্রই তাঁরা এক পায়ে হাজির। শুধু মুর্শিদাবাদ জেলাতেই আটকে নেই তাদের কাজ। তাঁদের সংগঠন সাহায্যের হাত পৌঁছে গিয়েছে সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকাতেও।
এদিন তালিবপুর হাই স্কুলে আয়োজিত খাদ্য সামগ্রী বিতরণে তাঁরা পৌঁছে যান ২০০০ টি পরিবারের কাছে। শুকনো খাবারের পাশাপাশি, দেওয়া হয় হাইজিন কিটও। সেখানে হাজির প্রতিটি মানুষকে দেওয়া হয় ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আটা, ১ কেজি মুসুর ডাল, ১ কেজি সর্ষের তেল, ৫০০ গ্রাম গুঁড়ো দুধ, ১ কেজি ছাতু, ১ কেজি সয়াবিন সহ ১০টি করে সাবান এবং ৪টি মাস্ক। অর্কিড ফাউন্ডেশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার অ্যানি আহমেদ যথার্থই খুশি এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পেরে। তিনি জানান, গতবছরও তাদের এই সংগঠন আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ১২ লক্ষ টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে। প্রয়োজনে নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করেও তাঁরা এগিয়ে এসেছেন সমাজের পাশে দাঁড়াতে। আজকাল আকছার অভিযোগ উঠছে, এনজিও গুলি অসহায় মানুষের আসলে ঠিক কী দরকার সেই খোঁজ রাখে না। নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সামগ্রী বিলি করে চলে আসে। সোহেল রানা আলম এই প্রসঙ্গে জানান, প্রতিটি এলাকায় তাদের সংগঠনের নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা সার্ভে করেন। তাদের সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তারা বেছে নেন কাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন এই খাদ্যসামগ্রী। সেই মতো তাঁরা এগুলি বিলি করেন তারা। প্রতি প্যাকেট পিছু খরচ হয়েছে ১৮০০ টাকা।
তবে অর্থের পরিমাণ নয়, তাদের মূল লক্ষ্য এই কঠিন সময়ে অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তারা চেষ্টা করছেন কীভাবে পরবর্তীকালে আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে তাদের প্রচেষ্টার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই লক্ষ্যেই তারা এগিয়ে চলেছেন সেই মশাল হাতে। অর্কিড ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপকৃত বাংলার বিশাল পরিমাণ মানুষ হয়তো এটাই বলছেন, “ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই।”
Discussion about this post