সাতসকালে পাড়ার টিউবওয়েলের চারপাশ ঘিরে জটলা করা একঝাঁক মহিলা। শাড়িটা কোমরে গুঁজে লাইন দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। কারো কাঁখে কলসি তো কারো হাতে প্লাস্টিকের বড় বালতি। তারপর জলটি ভরা হলেই হাজির আপনার বাড়ির দরজায়। এ বাড়ি ওবাড়ির কুটনো কাটা থেকে ঘর পরিষ্কার। একগাদা কাজের দায়িত্ব ঝুলছে ওদেরই ঘাড়ে। প্রতিটা পাকাবাড়ির ভেতর মহলটি যেন ওদের সাহায্য ছাড়া এক্কেবারেই অচল। সংসারের সমস্ত খুঁটিনাটিতে জড়াতে জড়াতে কখন যেন তারা পরিবারের একজন হয়ে ওঠে, টেরই পাওয়া যায় না। বাড়ির সেই অতি পরিচিত মুখ অর্থাৎ পরিচারিকার সাধ ভক্ষণ অনুষ্ঠানে নেটপাড়া বেশ গদগদ।
হাতে হাতে কাজ করা বাড়ির সেই দরকারি মানুষটা আজ গর্ভবতী। তাই তার খুশির জন্য সাধ ভক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন বাড়ির কর্ত্রী। আসন পেতে তাকে বসিয়ে যত্ন করে দিলেন ধান দুর্বার স্নেহাশিস। সামনে সাজালেন ঝুড়ি ভরা ফলের জোগাড়। থালায় উঠল রকমারি তরকারিসহ পোলাও সাদা ভাত। প্লেটে মিষ্টির বাহার আর সাথে রইল আলতা সিঁদুর। ভদ্রমহিলা নিজে হাতে খাইয়েও দিলেন তাঁর নিত্যদিনের সেই সাথীটিকে। পরিচারিকা নয়, সাহায্যকারীণী হিসেবেই আজ সে হয়ে উঠল পরিবারেরই এক সদস্যা।
ভালোবাসা আদর যত্ন স্নেহ এই অনুভূতিগুলো হয়ত আলাদা করে শিখতে হয় না। এসব আবেগের জন্য চাই শুধু খাঁটি একটি মন। আর তেমনই এক নিখাদ মনের পরিচয় দিলেন ওই ভদ্রমহিলা। পুজো আসলে হাতে পুজোর বোনাস ধরান অনেক বাড়িই। তার মধ্যে থাকে শুধুই দায়সারা কর্তব্য। কিন্তু এভাবে বাড়ির মেয়ের মতো পরিচারিকার সাধ ভক্ষণের অনুষ্ঠান যেন সমাজের কাছে আবেগঘন এক নতুন দৃষ্টান্ত।
Discussion about this post