পরিবেশ দিবস এলেই চারিদিকে হিড়িক পড়ে যায় গাছ পোঁতার। আর ওইদিন বৃক্ষরোপণের কাদামাখা একটা ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে না দিলেই নয়। হাজার হোক প্রমাণ দিতে তো হয় আমরা কত্তটা ভালোবাসি পরিবেশকে তাই না! হ্যাঁ ওই একটাই দিন। বাকি দিনগুলোতে যে গাছগুলোর যত্ন নিতে হবে তার সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই। সে যাই হোক পরিবেশকে আমরা কোনোদিন ভালোবাসতে পারিনি। প্রয়োজনে ব্যবহার করি মাত্র। আর তারই জ্বলন্ত উদাহরণ আজ উঠে এল আমাদের সামনে।
হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের তিনটি গ্রাম মহিষগোট, চতুর্ভূজকাটি আর ভগবতীপুর। ২০০০ সালে এই বসতিগুলোর কাছাকাছিই ধুলাগড়ে অম্বুজা সিমেন্টের একটি কারখানা বসে। আর তারপর থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। এলাকাবাসীদের আপত্তি অভিযোগ কোনো কাজেই দেয়নি। পরীক্ষা করে দেখা গেছে বর্তমানে স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশী দূষণ ছড়িয়ে চলেছে এই কারখানাটি। আর তাতে হয়রানির স্বীকার আজ সমগ্র এলাকাবাসী। বাচ্চা বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণের পকেটে এসেই গিয়েছে ইনহেলার। সিমেন্টের রাসায়নিক পদার্থ রোজ দিন জমা হচ্ছে ফুসফুসের মধ্যে।
শুধুই কি মানুষ! গরু ছাগলও মুখে তুলতে পারছে না তাদের খাবার গাছপাতা। কারণ তাতেও যে সিমেন্টের স্তর জমেছে। জীবিকা নষ্ট হচ্ছে গ্রামের সব্জিচাষীদের। সিমেন্টে ভর্তি সব্জি বিক্রি না হওয়ায় তাদের রোজগার বন্ধ হওয়ার জোগাড়। কিছু বাড়ি গ্রীন হাউস করে চাষ করে থাকেন। কিন্তু তাদের ওই কাঁচের দেওয়াল জুড়ে শুধুই সিমেন্ট। সূর্যের রশ্মির অভাবে গ্রীন হাউসের গাছগুলোও মরছে একে একে। গ্রামের বাসিন্দাদের তরফে কথা হল সৌমেন মালিক এবং দুধ কুমার পাত্রের সঙ্গে। সৌমেন বাবুর অভিযোগ, বহুবার কোম্পানিকে জানালেও সমস্যার সুরাহা হয় নি। গ্রামবাসীর খাবারের থালা জুড়ে শুধু সিমেন্টের কণাগুলো পড়ে। তাই তাদের খাওয়া উঠছে মাথায়। পরিস্থিতিটা দিন দিন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। অবিলম্বে এর প্রতিকার না হলে এই অঞ্চল ছাড়তে হতে পারে অসহায় গ্রামবাসীদের।
অন্যদিকে দুধ কুমার পাত্র জানালেন, রাজনৈতিক দলের নেতারা সাপের গালে এবং ব্যাঙের গালে চুমু দেওয়ার মতো দুমুখো নীতি নিয়ে চলছে। একদিকে তাঁরা গ্রামবাসীদের চটাতে চাইছেন না, অন্যদিকে ঘা দিতে চাইছেন না কর্পোরেট স্বার্থেও। ডেইলি নিউজ রিলের তরফে অম্বুজা সিমেন্ট কর্তৃপক্ষের কলকাতার অফিসে ফোন করা হলে তাঁরা এই বিষয়ে কথা বলতে চান নি। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক ওই গ্রামবাসীদের করা অভিযোগ সম্পর্কে বিশদে জানাতে পারলেন না। যদিও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেরিয়ে এল এক তথ্য। ধুলাগড়ে অম্বুজা সিমেন্টের কারখানা নিয়ে তাঁদের কাছে ইতিমধ্যেই নাকি একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
অসহায় গ্রামবাসীদের এগিয়ে এসেছেন কিছু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। একটি পরিবেশ কমিটিও তৈরী করা হয়েছে আন্দোলনের জন্য। চলছে প্রতিবাদের ঝড়। প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছে মানুষ। অভিযোগের পর অভিযোগ জানানো চলছে সরকারি দপ্তরগুলোতে। কিন্তু চোখ উল্টে দেখার সময়ও নেই কারোর। দুই সরকারি আধিকারিক এসে সবটা দেখে শুনে বলেন ,”২৪ ঘন্টা মাস্ক ব্যবহার করুন।” কিন্তু বছরের পর বছর মুখে মাস্ক এঁটে সারাদিন থাকা কীভাবে সম্ভব! অবস্থা বুঝে এখানের পরিবেশ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশানাল গ্রীন ট্রাইব্যুনালে অভিযান চালানোর। সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সহায়তা না পেলে এলাকাবাসীর ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে তলিয়ে যেতে চলেছে।
Discussion about this post