সমাজ চলে শাস্ত্র মেনেই। আর এই শাস্ত্র কে, কবে, কোন পরিস্থিতিতে তৈরী করেছিলেন সে জ্ঞান বোধহয় আমাদের কারোরই নেই। সমাজ মাতৃতান্ত্রিক ছিল কোনো এক যুগে। কিন্তু পরে সেই মাতৃতান্ত্রিকতা লোপ পেয়ে চালু হয়েছে পিতৃতান্ত্রিক আইনবিধি। ফলতঃ মেয়েদের উপর এসেছে শুধুই নিষেধাজ্ঞার এক প্রকান্ড তালিকা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগোচ্ছে সেইসব নিষেধের জারিজুরি মেনেই। এর শেষ কোথায়? এই দশকের মেয়েরা তাদের গন্ডি ঘেরা বেড়াজালগুলোকে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করতে চাইছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্বীকারও করছে কুসংস্কারের অন্ধকারকে। আর তাতেই ঘটছে সংঘাত।
সম্প্রতি রায়গঞ্জের একটি মেয়ের নিয়ম ভাঙ্গার ডাকে সাড়া পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নাম ঊষসী চক্রবর্তী। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলটি থেকে জানা যায়, মাসিকের দ্বিতীয় দিন থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের হাতে মা সরস্বতীর বন্দনা করেন। পৌরোহিত্য তিনি তাঁর বাবার থেকে শিখেছেন। পুজোর দিন চলছিল মাসিক চক্র। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করে সাম বেদের আচার মেনে বাড়ির পুজোর পৌরহিত্য করেন তিনি। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় ফেসবুকে তা পোষ্ট করে জানানোর পরই। পৌরোহিত্য করার ক্ষেত্রে মেয়েদেরও অধিকার রয়েছে, এ লড়াই তো চলছিলই। কিন্তু তার সঙ্গে আবার বিষফোঁড়া হল পিরিয়ডস চলাকালীন পুজো! বেশ কিছুজন তাঁর এই দুঃসাহসিক উদ্যোগকে স্যালুট জানালেও মেনে নিতে পারেন নি অনেকেই। ছুটে আসছে নানা কথার ঝড়। হিন্দুধর্মের দেবদেবীকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছেন এমনই অপবাদ দেওয়া চলছে। এমনকি তাঁর চরিত্র নিয়েও কু-ইঙ্গিত দিচ্ছেন কিছু গোঁড়া মানুষ।
তবে ঊষসী সদর্থক চিন্তাধারার মানুষ। এসবের প্রত্যুত্তরে তিনি জানিয়েছেন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কাজ করলে বিপক্ষেই থাকবে বেশিরভাগ। এ তো চিরকালীন রীতি। তবুও তিনি আশাবাদী যে সমাজ এসব কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে একদিন শিক্ষিত হবেই। স্মার্টফোনের যুগে শুধু হাতে স্মার্টফোন নয় চিন্তাধারা বিচারবুদ্ধিতেও চাই স্মার্টনেস। তাই নয় কি?
Discussion about this post