বাঙালি আর মিষ্টির কেমিস্ট্রির কথা তো সবাই জানে। বাঙালির যেকোনো উৎসবের শুরু এবং শেষ মিষ্টি দিয়েই হয়৷ অতিথি আপ্পায়নেও মিষ্টির জুড়ি নেই। রসনার তৃপ্তির জন্য তাই বাঙালি যুগ যুগ ধরে মিষ্টি নিয়ে গবেষণা করেই চলেছে। এর ফলস্বরূপ বহু প্রকার মিষ্টি পাতে স্থান পেয়ে আসছে। আর কিছু মিষ্টির সাথে রীতিমতো ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এইরকমই ক্ষীরপাইয়ের বিখ্যাত এক মিষ্টি ‘বাবরসা’। পিছনে জড়িয়ে রয়েছে যার অনেক ইতিহাস।
শোনা যায় ক্ষীরপাই জনপদের এই বিশেষ মিষ্টি খোদ মোঘল সম্রাট চেখে দেখেন এবং সেখান থেকেই এই নামকরণ। আবার কিছু মানুষ তা বিশ্বাস করতে নারাজ। তাদের মতে, বাংলায় বর্গী আক্রমণের সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের এই অখ্যাত গ্রামে খুব লুটপাট চালায় তারা। ক্ষীরপাইয়ের মানুষরা আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে থাকে। এইসময় উনাদের পাশে এসে দাঁড়ান এক ইংরেজ এডওয়ার্ড বাবরস। তিনি বর্গীদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করেন। পরে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এখানের জনৈক পরাণ আটা নামের মিষ্টি বিক্রেতা, এই মিষ্টি তৈরি করে তাঁকে উপহার করেন।
এতো গেল ইতিহাসের কথা। ইতিহাস যাই না কেন, স্বাদের সাথে কোনো আপোষ চলে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের এই মিষ্টি এক ঐতিহ্য বয়ে চলেছে। ময়দা, ঘি ও মধু সহযোগে তৈরি এই মিষ্টি মুখে গেলে যেন অমৃত লাভ। এর আকার প্রায় অমৃতির মতো। গরম ঘি’তে ফোঁটা ফোঁটা করে ময়দা গোলা ঢেলে তাকে রূপ দিয়ে মধু সহযোগে পরিবেশন করা হয়।এমন মিষ্টির কথা আমরা হয় তো খুব কমই শুনে থাকব। তবে শহরে তথাকথিত মিষ্টি গুলির মধ্য এটি তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করে উঠতে পারে নি। এটি তৈরির খরচও বেশি ফলেই দামও খানিক বেশিই। ফলে এই মিষ্টির বিক্রি কম।
এমন ঐতিহ্যবাহী খাবার এক প্রকার বিলুপ্তির দিকে। ইতিহাসে জায়গা থাকলেও মানুষের মনে এটি উপযুক্ত জায়গা করে তুলতে পারছে না। এভাবে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এটির অস্তিত্ত্ব। ক্ষীরপাইয়ের মিষ্টি বিক্রেতারাও তাই চায় এই মিষ্টি যোগ্য ভালবাসা পাক মানুষের। এভাবে একটা ঐতিহ্যবাহী খাওয়ারকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। প্রয়োজনে সরকারই নিক উদ্যোগ। মানুষ জানুক এর ইতিহাস। লোক মুখে আজীবন বেঁচে থাকুক ক্ষীরপায়ের ‘বাবরসা’ তথা বাংলার এই ঐতিহ্যশালী মিষ্টির স্বাদ।
Discussion about this post