বাঙালি বাড়ির অনুষ্ঠান কিংবা শুভ কাজ সবেতেই দইয়ের আনাগোনা প্রাচীন কাল থেকেই। শুভ কাজে যাওয়ার আগে দইয়ের ফোঁটাই হোক কিংবা খাবারের শেষ পাতে দইয়ের অধিষ্ঠান সবেতেই মিশে রয়েছে দইয়ের ছোঁয়া। আবার সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দইও এখন রকমারি। শুধুমাত্র টক দই অথবা মিষ্টি দই নয়, তার সঙ্গে রয়েছে নানা ধরনের নির্যাস মেশানো আধুনিকতায় মোড়া ভিন্ন স্বাদের দইয়ের সম্ভার। শোনা যায় এই ভিন্ন স্বাদের দইয়ের রমরমা শুধু বর্তমানেই নয় বরং সে যুগের নবাবিয়ানাতেও সাড়া জাগিয়েছে দই বাবাজি।
বাংলাদেশের বগুড়া শহর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলায় প্রথম আবিষ্কার হয় রকমারি দই। শোনা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের দিকে গৌড় গোপাল পাল নামের এক ময়রা নিতান্তই শখের বশে পোড়ামাটির সরায় তাঁর পরিবারের জন্য ভিন্ন স্বাদের দই তৈরি করেন। কিন্তু এই ভিন্ন স্বাদের দই এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে তার দইয়ের কদর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কথিত আছে, বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানি পরিবারের কাছে এই দই সরবরাহ করা হত। সে সময় যার পোশাকি নাম ছিল নবাববাড়ির দই। স্বাদে অতুলনীয় মুখে দিলে যেন অমৃত। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দইয়ের ব্যপ্তি আরও ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে গৌড় গোপালের পাশাপাশি মহরম আলী ও বাগমারার রাফাত আলীও প্রসিদ্ধ হন এই ভিন্ন স্বাদের দই তৈরিকে কেন্দ্র করে। ছোট ছোট মাটির পাত্রে দই ভরে তৈরি হত ভিন্ন স্বাদের দই।
বহু বছর পেরিয়ে গেলেও আজও একই রয়েছে বগুড়ার দইয়ের জনপ্রিয়তা। বর্তমানে দই বিক্রির ক্ষেত্রে এসেছে নানা পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া। তবু তদানীন্তন ঐতিহ্যকে বহন করে আজও বগুড়ার দই বিক্রি করা হয় বিশেষভাবে। এখানে ওজনে নয় বরং দই কিনতে হয় সরা হিসেবে। এছাড়াও বিশেষ প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে গরমকালে দুই থেকে তিন দিন এবং শীতকালে চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত দই সংরক্ষণ করা যায়।
বাংলাদেশের বগুড়া শহরের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দইয়ের বিভিন্ন দোকান। সে স্বাদ পেতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন মানুষ। আর আতিথিয়তায় হোক কিংবা শুভ কাজে, দইয়ের শুভ পদক্ষেপের কথা কে না জানে! আর এখানেই বাঙালির রসনাতৃপ্তিতে দইয়ের মাধুর্যতা।
সম্পাদনা করেছেন শ্রেয়সী দে
Discussion about this post