রংপুর অঞ্চলে শীত পড়তে না পড়তেই জমে উঠেছে লেপ-তোশক তৈরির বাজার। প্রতি বছর শীতের মৌসুম ঘনিয়ে এলেই গঙ্গাচড়া উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে দেখা যায় কারিগরদের বাড়তি ব্যস্ততা। নভেম্বর থেকেই বাড়তে থাকে তুলো ধুনন, কাপড় কাটা, সেলাই ও পুরনো লেপ-তোশক নবায়নের কাজ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এই বেচাকেনা থাকে তুঙ্গে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার ভিড়ও বাড়ছে, ফলে কারিগরদের বাজারমুখী প্রস্তুতি এখন পুরোদমে চলছে। গঙ্গাচড়া ও আশেপাশের বাজারগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেপ-তোশক তৈরির শব্দ যেন মৌসুমি এক আলাদা ছন্দ তৈরি করেছে।

গঙ্গাচড়া ও আশেপাশের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেউ স্থায়ী দোকানে বসে আবার কেউ গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী লেপ-তোশক তৈরি করছেন। কেউ পুরনো লেপে নতুন তুলো মিশিয়ে সেটিকে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তুলছেন। আবার কেউ পুরোপুরি নতুন লেপ তৈরির অর্ডার সামলাচ্ছেন। তুলো পরিষ্কার করা, ধুনন, কাপড় কাটা এবং সেলাই – প্রতিটি ধাপেই এখন বাড়তি চাপ। গঙ্গাচড়া বাজারের থানা মোড় এলাকায় কারিগর শাহাদাত জানান, বছরের এই সময়টাতেই তাদের সবচেয়ে কর্মব্যস্ততা থাকে। তাঁর ভাষায়, “শীত শুরু হলেই আর নিস্তার নেই। সারাদিন-সারারাত কাজ করতে হয়।” তিনি জানান, লেপের কাপড় গজে ৫০-৭০ টাকা, তোশকের কাপড় ৬০-১৩০ টাকা; গার্মেন্টসের তুলো কেজিতে ৬০-১৭০ টাকা আর শিমুলের তুলো ৪৫০ টাকা। লেপ তৈরির মজুরি ৩০০-৪০০ টাকা এবং তোশকের মজুরি ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে।

অন্যদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাস্টারপাড়ার কারিগর শফিকুল ইসলাম তুলোর দাম বৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাঁর মতে, প্রতিটি উপকরণের দামই এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বিনিয়োগ বাড়লেও লাভের অঙ্ক কমে গেছে। “আগে যে অর্ডার থেকে ভালো আয় হত, এখন সেখানে খরচটাই বেশি উঠে আসে” – বলেন তিনি। তুলো, কাপড়, সুতো, শ্রম – সবকিছুর মূল্য একসঙ্গে বাড়ায় কারিগরদের লাভের হিসাব ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। তবুও মৌসুমি চাহিদার কারণে কাজ থেমে নেই, দিন-রাত কাজ করে যেতে হচ্ছে তাদের।

ক্রেতাদের মাঝেও রয়েছে নানা ভাবনা। এক গৃহিণী জানান, পুরো নতুন লেপ বানাতে গেলে খরচ অনেক বেশি পড়ে। তাই পুরনো লেপে নতুন তুলো মিশিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, এতে খরচ প্রায় অর্ধেক কমে যায়। বহু পরিবারই তাই পুরনো লেপ-তোশক নবায়ন করিয়েই শীত মোকাবিলা করার পথ বেছে নিচ্ছেন। কারিগরদের মতে, খরচ বাড়লেও মানুষের মৌসুমি প্রয়োজন ও নির্ভরতা ঠিকই কাজের গতি ধরে রাখে। বছরের সবচেয়ে কর্মব্যস্ত সময়টি তাই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এনে দেয় তাদের জীবনে। আর শীতের সঙ্গী হিসেবে নতুন-পুরনো লেপ-তোশক আবার জায়গা করে নেয় মানুষের ঘরে।
চিত্র ঋণ – মহম্মদ সাইফুল ইসলাম, আছিয়া লেপ তোষক ঘরের ফেসবুক পেজ






































Discussion about this post