বাংলাদেশে শীতলপাটির ব্যবহার দীর্ঘদিনের, তবে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলাও এই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শিল্পপণ্যে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলেছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীন খাদি গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের উদ্যোগে কোচবিহারের শীতলপাটিকে ভূগোল নির্দেশক (GI) স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ২০২১ সাল থেকে। জেলার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি সংখ্যক কারিগর এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এই শিল্প কোচবিহারের অর্থনীতির একটি বড় স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর অনেক অর্থের রফতানি হয় এই পণ্যকে ঘিরে।

বাজারে কৃত্রিম মাদুরের রমরমা রয়েছে, তবুও প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শীতলপাটির কদর এখনও অটুট। শুধুমাত্র মাদুর নয়, শীতলপাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্যাগ, আসন, ঘরোয়া সজ্জার সামগ্রী এবং উপহার সামগ্রীও। শীতলপাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক বৃহৎ হস্তশিল্পভিত্তিক কর্মসংস্থান ব্যবস্থা, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার শিল্পীর জীবন-জীবিকা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মতে, বাংলার মাটি ও সংস্কৃতির গন্ধ মিশে রয়েছে এই শীতলপাটির প্রতিটি বুনটে। এটি শুধু একটি সামগ্রী নয়, বরং একটি ঐতিহ্যের প্রতিফলন।

শীতলপাটির উৎপাদনের সঙ্গে কোচবিহারের জলবায়ু ও মাটি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে। দেশভাগের আগে শীতলপাটি ছিল অবিভক্ত বাংলার পরিচিত পণ্য। কোচবিহারের মাটিতে এখনও সেই ঐতিহ্য বেঁচে রয়েছে। এই শিল্পকে আরও বিস্তৃত পরিসরে পৌঁছে দিতে এবং কোচবিহারবাসীর আত্মপরিচয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে জিআই স্বীকৃতি একটি বড় পদক্ষেপ হবে। এই উদ্যোগের ফলে কোচবিহার ও আশেপাশের এলাকার মানুষ আরও বেশি করে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহ পাবেন। জিআই স্বীকৃতি পেলে শীতলপাটির আন্তর্জাতিক বাজারে কদর আরও বাড়বে, এবং এই শিল্প আরও সুসংহত ভিত্তির উপর দাঁড়াবে।
Discussion about this post