পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে জনপ্রিয় ভ্রমণ ব্লগার ও ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা। ‘ট্র্যাভেল উইথ জো’ নামে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ভিডিও বানাতো। এনআইএ, আইবি ও হরিয়ানা পুলিশের যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তানে ভ্রমণকালে সে আইএসআই এজেন্টদের সংস্পর্শে আসে। সে নিজেও এ কথা স্বীকার করেছে। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, তার পাকিস্তানের সঙ্গে পারিবারিক যোগসূত্র রয়েছে—দেশভাগের আগে তার ঠাকুরদা-ঠাকুমা মুলতান ও ভাওয়ালপুরে বসবাস করতেন। জ্যোতির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং লেনদেনের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সন্দেহ করা হচ্ছে বিদেশ থেকে টাকা আসত। ইতিমধ্যে তিনটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।

করোনা পর্বে বেসরকারি চাকরি ছেড়ে ইউটিউব কেরিয়ার শুরু করেছিল জ্যোতি। পাকিস্তানভিত্তিক ভিডিওর ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’ তাকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে। মাত্র দুই বছরে এক লক্ষ সাবস্ক্রাইবার ও ইউটিউব সিলভার বাটন অর্জন করে সে। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, সে পাকিস্তানের সেনা-নিয়ন্ত্রিত ও নিষিদ্ধ এলাকাতেও ভিডিও করত, বিলাসবহুল হোটেলে থাকত এবং উচ্চপর্যায়ের পাকিস্তানি কর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করত। তার সঙ্গে পাক হাইকমিশনের দানিশ নামে এক কর্মীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সেখান থেকেই সে আইএসআইয়ের নেটওয়ার্কে যুক্ত হয় বলে তদন্তকারীদের অনুমান। জ্যোতি বিপদের আঁচ পেয়ে চ্যাট মুছে ফেলার চেষ্টা করলেও, আধুনিক প্রযুক্তির জালে সে ফেঁসে যায়।

জ্যোতির যাত্রাপথ শুধু পাকিস্তান বা বাংলাদেশই ছিল না, ছিল ভারতের সংবেদনশীল এলাকাও। সে শিলিগুড়ি, নদিয়া, ব্যারাকপুর, শেওড়াফুলি, শিয়ালদহ স্টেশন, দক্ষিণেশ্বর সহ কলকাতার নানা জায়গায় ঘুরেছে, যা সন্দেহজনকভাবে তথ্য সংগ্রহ বা নেটওয়ার্ক গড়ার উদ্দেশ্যে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি সে স্বর্ণমন্দির, কাশ্মীর ও সেনা ঘাঁটির ভিডিও করেছে। তদন্তকারীরা আইএসআই কর্মকর্তা আলি হাসানের সঙ্গে চ্যাটের প্রমাণও পেয়েছে, যা টেলিগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো এনক্রিপ্টেড অ্যাপে হত। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, জ্যোতি শুধু একটি মুখ, এই নেটওয়ার্কে আরও বহু মুখ রয়েছে, যেগুলি ভবিষ্যতে একে একে সামনে আসবে।
Discussion about this post