রাস যাত্রা শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বৃন্দাবনের মনোরম পরিবেশ, রাধাকৃষ্ণের প্রেমের রসালো লীলা আর গোপিনীদের মধুর গান। এই উৎসবটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভক্তি, প্রেম, আনন্দ ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাস যাত্রার উৎস খুঁজতে গেলে আমাদেরকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার গভীরে যেতে হয়। শ্রীকৃষ্ণ যখন ব্রজে বালক রূপে বাস করতেন, তখন তিনি রাতে গোপিনীদের সাথে রাসলীলা করতেন। এই রাসলীলাই হল রাস যাত্রার মূল প্রেরণা। বৈষ্ণব ধর্মে এই রাসলীলাকে ভক্তি ও ভগবানের মিলনের একটি প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আজও ধুমধাম করে রাস উৎসব পালিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম পুরুলিয়ার রাসমেলা।
পুরুলিয়ার রাসমেলা, এই নামটিই যেন মনকে টানে এক অন্য রকম আকর্ষণে। পুরুলিয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ রাসমেলা। এই মেলা শুধুই একটি সাধারণ মেলা নয়, এটি পুরুলিয়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং লোকজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুরুলিয়া পুরসভা এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের রাসমেলা ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। এই রাস উৎসব শুরু হয় রাস পূর্ণিমার পাঁচ দিন পর থেকে।
দীর্ঘ ৭৮ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এই রাস উৎসব চলে আসছে। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও এই রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ১১ দিন ব্যাপী নানাবিধ অনুষ্ঠান অর্কেষ্ট্রা, বাউল গান, নাম সংকীর্তন ও সামাজিক যাত্রাপালা সহকারে এই মেলা চলবে। এ বছর ২০ নভেম্বর থেকে রাস উৎসবের সূচনা হয়েছে পুরুলিয়া রাসমেলা ময়দানে। প্রতি বছর এই ময়দানের চারিদিকে ছোট ছোট দোকান সাজানো হয়। দোকানগুলিতে নানা রকমের পণ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, যেমন – কাপড়, জুতা, খেলনা, গৃহস্থালির সামগ্রী, মিষ্টি, মুড়ি, চানাচুর ইত্যাদি। মেলার মধ্যভাগে সাধারণত একটি মঞ্চ সাজানো থাকে, এখানেই গান, নাচ এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মেলায় স্থানীয় কারিগরদের তৈরি হাতের কাজের পণ্য যেমন – তাঁতের শাড়ি, বেতের কাজের জিনিসপত্র, লোহার কাজের সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়। এগুলি মেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ। মেলার আরেকটি বড় আকর্ষণ হল খাবার। বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় খাবার যেমন – পিঠে, মুড়ি, চানাচুর, ফুচকা ইত্যাদি মেলায় পাওয়া যায়। এছাড়াও মেলায় ছোট ছোট খেলাধুলার আয়োজনও করা হয়।
চিত্র ঋণ – নির্মল চন্দ্র মাহাতো
Discussion about this post