বাঙালির প্রিয় ঋতু বর্ষা তাই, বর্ষা এলেই শুধু ইলিশ খাই! বাঙালি মানে কিন্তু শুধু পশ্চিমবাংলা নয়, বাংলাদেশের বাঙালিও বটে। ইলিশ মাছ কে না ভালোবাসে? বাঙ্গাল-ঘটি যত যুদ্ধই চলুক, ফুটবল মাঠে যতই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান লড়াই চলুক, অন্য সব রান্না কে ভাল পারে, আর কে পারেনা, কার রান্নায় মিষ্টি নেই, আর কার রান্নায় সরবত গোলা জল আছে সে সব নিয়ে উলুখাগড়ার লড়াই যতই চলুক; এই সব কিছুর বাইরে কিন্তু ইলিশ মাছ। আর সারাবছর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি অপেক্ষায় থাকেন বাংলাদেশ থেকে আসা পদ্মার ইলিশ খাবেন বলে। কিন্তু, বর্তমানে চলতি মরসুমেও ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা।
বেশি তাপমাত্রা ও কম বৃষ্টির কারণে সাগরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের ইলিশ ধরা পড়ছে না। গভীর সাগর থেকে উপকূলে ইলিশ আনতে ভারী বর্ষণের দরকার। প্রতিবছর এই সময় মা ইলিশের ঝাঁক সমুদ্র থেকে নদীর মিষ্টি জলে আসে ডিম পাড়ার জন্য। তখনই শুরু হয় ইলিশের মরসুম। কিন্তু কক্সবাজার সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বড় অঞ্চলেও বড় ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। এ জন্য তীব্র দাবদাহ আর অপর্যাপ্ত বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন মৎস্য বিভাগ, ট্রলার মালিক ও জেলেরা। ফলে বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গের বাজারেও ইলিশের দাম আকাশ ছোঁয়া। মাথায় হাত মাছব্যবসায়ীদের।
ইলিশ যেন এক করে দেয় দুই বাংলাকে। বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, ‘রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে জলের উজ্জ্বল শস্য, রাশি-রাশি ইলিশের শব, নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়। তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে ইলিশ ভাজার গন্ধ, কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার সরস সর্ষের ঝাঁজে। এলো বর্ষা, ইলিশ উৎসব।’ বাংলার টীকাকার পণ্ডিত ‘জীমূতবাহন’ ৯০০ বছর আগে বাংলায় ইলিশ মাছের নামকরণ করেছিলেন। ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে একত্রিশটি মাছের মধ্যেও রয়েছে ইলিশ। বিবেকানন্দ বা সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ইলিশ প্রীতির কথা কে না জানে! সব মিলিয়ে ইলিশের তুলনা একা ইলিশই। সেই মাছের থেকেই মুখ ফিরিয়েছেন বাংলার মানুষ।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ ঢুকেছে পশ্চিমবঙ্গে। দুর্গাপুজো উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ৩,৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির ছাড়পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। রাজ্যের পাইকারি বাজারগুলিতে আমদানিকৃত ইলিশ ঢুকেছে। কিন্তু ব্যবসা প্রায় লাটে। কারণ ইলিশের দাম। বাংলাদেশ থেকে আসা ইলিশের স্বাদ নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করছেন খাদ্যরসিকেরা। ব্যবসায়ীদের ঝুঁকতে হয়েছে দিঘার সমুদ্রের ইলিশের দিকে। আগের বছরেও আবহাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সমুদ্রে ইলিশের আকাল দেখা গিয়েছিল। পদ্মার ইলিশের রসনা কে ক্ষান্ত রাখার আশঙ্কায় এখন এপার বাংলার বাঙালি।
Discussion about this post