বীরভূম শুনলেই বাঙালি মন বলে শান্তিনিকেতন। আর রামপুরহাট মানেই জানে তারাপীঠ। আর এসব জায়গায় ঘুরঘুরের মধ্যেও কিন্তু আধখানা মন থাকে ভুরি-ভোজনের লিস্টে। পছন্দমত পোলাও-কালিয়া-মিষ্টি-ভাজাভুজি পেলে বেড়ানোর আনন্দও ডবল। সুতরাং সেই দিকটি নড়চড় হওয়ার জো নেই। আজ সেই আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তোলার খোঁজ দেব খাস রামপুরহাটের বুকেই।
বীরভূম গেলে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন রামপুরহাটে ডাকবাংলো পাড়ার বারিক মিষ্টান্ন ভান্ডার। দুমকা রোডের উপরেই প্রায় আশি বছরের পুরনো এই দোকান। খুঁজে পেতে সমস্যা হবেনা একটুও। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য মিষ্টির দোকানের মত এখানেও রসগোল্লা-পান্তুয়া থেকে শুরু করে মেলে দুধ-দই-সিঙ্গারা-জিলিপিও। তাহলে এই দোকানের বিশেষত্ব কি? বিশেষত্ব হল রোজেট। পান্তুয়া নয়, ল্যাংচাও নয়। দেখতে ঠিক যেন একটা ছোটখাটো ডিম। বাইরের দেহ ভাজা হলেও, কড়া নয়। এক্কেবারে নরম, রসে টইটম্বুর। মিষ্টির ভিতরে ঠিক মাঝখানে গোলাপ জলের গন্ধওয়ালা লাল ক্ষীর। এই রোজেটেই প্রায় ৮০ বছর মজে আছে রামপুরহাট। এতদিন পেরিয়ে গেলেও চাহিদা কমেনি একটুও। প্রতিদিনই তৈরি হতে না হতেই ফুরোয় রোজেটের গামলা। বাইরের মানুষরা যাঁরাই একবার স্বাদ পান, তাঁরাই মুগ্ধ হয়ে বাক্স বোঝাই করে রোজেট নিয়ে যান নিজের জায়গায়।
বারিক মিষ্টান্ন ভান্ডারের বর্তমান মালিক অসিত বারিক জানাচ্ছেন এই মিষ্টি প্রথম তৈরি করেন তাঁর বাবা অবনী কুমার বারিক। অসিতবাবু বলছেন, “জাস্ট এক্সপেরিমেন্ট করবে বলেই বাবা বোধহয় রোজেট বানিয়েছিল। লেডিকেনি আর পান্তুয়া থেকে আলাদা কি করা যায় ভাবতে ভাবতে একদিন বাবা বানালো ডিমের আকারের রোজেট। ভিতরে ডিমের কুসুম যেমন থাকে, ঠিক তেমনি ভাবেই পুরে দিল গোলাপ জলের গন্ধওয়ালা ক্ষীর।“ রামপুরহাটের বাসিন্দা এবং রোজেটের নিয়মিত খদ্দের পৃথ্বীশবাবু জানালেন, “এখন রামপুরহাটের অনেক মিষ্টির দোকান রোজেট বানালেও বারিকের মতো স্বাদ এখনও পর্যন্ত কোথাও পাইনি।”
বীরভূমের প্রাচীনতম মিষ্টির দোকানগুলির মধ্যে অন্যতম এই বারিক মিষ্টান্ন ভান্ডার। এখন মালিক অসিতবাবু হলেও দোকান দেখাশোনা করছেন তাঁর পুত্র তীর্থ বারিক। এভাবেই জেনারেশনের পর জেনারেশনে ছড়িয়ে পরেছে রোজেটের রেসিপি। আর রোজেটের চাহিদায় মানুষের ভিড় বাড়ছে, বৈ কমছেনা। আপনিও বেড়ানোর ফাঁকে টুক করে চেখে আসুন রামপুরহাটের স্বাদের জাদু এই রোজেট।
Discussion about this post