রসগোল্লার জন্মস্থান নিয়ে তর্ক তো বহু হয়েছে। রসগোল্লা জন্মেসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের থুড়ি কলকাতার এ কথা তো জানলাম সকলেই। পশ্চিমবঙ্গ হলো মিষ্টি ভারতের মিষ্টি রাজ্য। ফলত এই রাজ্যে জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে নানা মিষ্টির খাজানা। কোথাও বিখ্যাত ল্যাংচা, কোথাও মিহিদানা, কোথাও বা বাবরসা। এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বাঁকুড়ার জনপ্রিয় বড়ি মন্ডা। কিন্তু জনপ্রিয়তাই তো শেষ কথা নয়! বাঁকুড়ার এই বড়ি মন্ডা কিন্তু চাইছে তার নিজেস্ব এক খানা স্বীকৃত। নিজস্ব জি আই ট্যাগ!
মিষ্টি তৈরিতে বাঁকুড়া বহু দিন ধরেই একটা অন্য জায়গা ধরে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গে। বাঁকুড়া জেলার নানা প্রান্ত থেকে নানা মিষ্টি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু স্বীকৃতির লড়াইতে সবথেকে এগিয়ে বাঁকুড়াই সোনামুখী খ্যাত মিঠাই বড়ি মন্ডা। সোনামুখী অঞ্চলে সমস্ত ছোট বড়ো অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি পাতে থাকবেই। এই মিষ্টির বয়েস প্রায় দু’শ বছর এবং স্বাদেও তার জুড়ি মেলা ভার! শীতকালের অতি জনপ্রিয় মিষ্টি এই মন্ডা। চিনি ব্যবহার সারা বছর থাকলেও, শীতের নলেন গুড়ের কাছে তা টিকতে পারে না। শীতের নলেন গুড়ের ছোঁয়াতে এই মন্ডা হয়ে ওঠে রূপবতী থুড়ি স্বাদবতী। এই মন্ডা তৈরি করার পদ্ধতির দিকেও একবার নজর দেওয়া যাক! ছানা, চিনি, নলেন গুড় এবং ক্ষীরকে একসাথে মিশিয়ে নিয়ে উনুনে পাক দিয়ে তা তৈরি করা হয়। এবার ভিজে কাপড়ে তুলে বড়ির মতো মন্ড বানানোর পরেই প্রস্তুত বড়ি মন্ডা। বলাই বাহুল্য এই মিষ্টির একটি নিজেস্বতা আছে। চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা মিষ্টিদের থেকে বড়ি মন্ডা নিজেকে বেশ সরিয়েই রেখেছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় বাঁকুড়া জেলা জুড়ে এই মিষ্টির জনপ্রিয়তা থাকলেও রাজ্য জুড়ে এখনও তা পায় নি নিজের সঠিক স্থান। সোনামুখী মেলা, আন্তর্জাতিক বিষ্ণুপুর থেকে শুরু করে অন্যান্য জেলার মেলা গুলিতেও এর প্রচার হওয়া দরকার। পৃথক স্টল বসানো দরকার। বড়ি মন্ডার প্রাপ্য স্বীকৃতি অবশ্যই পাওয়া প্রয়োজন। বড়ি মন্ডা জনপ্রিয়তা বিশ্ব দরবারে পৌঁছালে তা আমাদের গোটা রাজ্যের জন্য গর্বের জায়গা তৈরি করবে। শুধু বাঁকুড়া কেন সারা বিশ্ব জুড়ে সকলেই সুযোগ পাক এর স্বাদ নেওয়ার!
Discussion about this post