একমাসের বেশি সময় পার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের। এই যুদ্ধে রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য এখন পূর্ব ইউক্রেন দখল। রুশ সেনাবাহিনীর সের্গেই রুদস্কইকের মতে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চলের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ নিশ্চিত করাই তাদের সৈন্যদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু কোনো জায়গা দখল নয়, একটি সামান্য কুকুরের জন্য দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বেধে যেতে পারে! যা শুনতে অসম্ভব মনে হলেও ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯২৫ সালে। একটি কুকুরের জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র গ্রিস এবং বুলগেরিয়া।
গ্রিস এবং বুলগেরিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব বেশ পুরানো। কিন্তু ম্যাসিডোনিয়ার দখল নিয়ে গ্রিস ও বুলগেরিয়ার মধ্যে এই বিবাদ চরমে ওঠে। কিন্তু গ্রিসের কাছে বারবারই হারতে হয় বুলগেরিয়াকে। এই নিয়ে সে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল। যে কোনো বাহানায় বুলগেরিয়া চাইছিল গ্রিসকে আক্রমণ করতে। কিন্তু সেই সময় গ্রিসের মসনদে ছিলেন স্বৈরশাসক প্যাঙ্গোলাস। যিনি যুদ্ধোন্মাদ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও সেই সময় বুলগেরিয়ার সামরিক পরিকাঠামো তখন অত্যন্ত খারাপ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ছিল। তাই এক পা এগোলেও দুই পা পিছনোর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বুলগেরিয়ার।
দিনটা ছিল ১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবর। সীমান্ত বরাবর গ্রিসের একজন সেনা একটি কুকুরকে নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই কুকুরটি তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বুলগেরিয়ার দিকে দৌড়ে চলে যায়। কিছু না ভেবে গ্রিসের সেই সৈন্যটি বুলগেরিয়া মধ্যে ঢুকে পড়েন কুকুরটিকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সীমান্ত পার করার অপরাধে তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করে বুলগেরিয়ার সৈন্যরা। এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজিত হয়ে ওঠে গ্রিস। তাদের বেশ কিছু সেনা পাল্টা আক্রমণ করে বুলগেরিয়ায়। এর পরের দিনই সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গ্রিসের সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন তার সঙ্গীকে নিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে গিয়ে হাজির হন। তাদের হাতে সাদা পতাকা ছিল, উদ্দেশ্য ছিল শান্তি স্থাপন। কিন্তু সমস্ত সীমা লংঘন করে বুলগেরিয়ার সেনারা সেই ক্যাপ্টেনকেও হত্যা করে।
এতে ব্যাপক ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গোটা গ্রিস। গ্রিসের তরফে বুলগেরিয়াকে চরমপত্র দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তাতে দু’লক্ষ ফ্রাঁ ক্ষতিপূরণ, প্রকাশ্যে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি, যে সমস্ত সেনা এই ঘটনায় জড়িতদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানানো হয়। কিন্তু ৪৮ ঘন্টার সময়সীমার পরও বুলগেরিয়া কোন দাবি মেনে না নিলে গ্রিস সেনাবাহিনী বুলগেরিয়ায় প্রবেশ করে। এই ঘটনায় বুলগেরিয়ার সেনা এবং সাধারন মানুষ মিলে ১০০ জনের মৃত্যু ঘটে। গ্রিসের ক্ষতির পরিমাণ ছিল নগন্য। তখন বুলগেরিয়ার তরফে জাতিসংঘের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। জাতিসংঘ গ্রিসকে নির্দেশ দেয় তারা যেন অবিলম্বে বুলগেরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে থেমে যায় যুদ্ধ। পরবর্তীতে বুলগেরিয়ার কাছ থেকে মাত্র ৪০ হাজার ফ্রাঁ ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিল গ্রিস। যুদ্ধ অর্থনৈতিকভাবে কয়েক দশক পিছিয়ে দেয় যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশদুটিকে।
Discussion about this post