বর্ষার কালো মেঘ সরিয়ে শরৎের রোদ্দুর উঁকি দিলেই বাঙালির মন হিসেব কষতে শুরু করে দেয় মা দুর্গার আগমনের আর কতদিন বাকি। বাঙালির সাড়ম্বরে মা কে আগমনের মধ্যে থাকে অনেক বৈচিত্র্য। তাহলে আজ লটারির টাকায় দুর্গাপুজোর গল্প জেনে নেওয়া যাক। প্রায় দুশো বছর আগের কথা। ১৮২২ সালের অক্টোবর মাস। আশ্বিনের শারদপ্রাতে দেবীর আগমনবার্তা শোনা যাচ্ছে কলকাতায়। ইংরেজরা তখন ভারতে ঢুকে পড়েছে। পলাশির যুদ্ধ পেরিয়ে নিজেদের রাজার আসনেও বসিয়ে ফেলেছেন। এমন সময় সেই সময়ের অন্যতম বিখ্যাত পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’-এর একটি খবরের দিকে সবার নজর পড়ল। তাতে লেখা, হাওড়ার শিবপুরে নাকি লটারি করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে! কস্মিনকালেও এমন কথা শোনেনি বাঙালি। লটারি কেটে পুজো!
তখন হাওড়া এবং শিবপুরের চিত্রটা একটু আলাদা ছিল। আজকের মতো শহর ছিল না এই অঞ্চল। কথিত আছে কলকাতার কোনো অপরাধীকে নৌকা করে ওপারে হাওড়ায় ছেড়ে আসা হয়েছে। সেখান থেকে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। কাজেই, কলকাতার মতো ঐশ্বর্য, জাঁকজমক সেখানের মানুষ প্রত্যক্ষই করেনি তখন। কিন্তু দুর্গাপুজো করতে তো তাঁদেরও ইচ্ছা করে! কিন্তু কী করে করবেন! এত টাকা কোথা থেকে পাবেন তাঁরা? শেষ পর্যন্ত আসরে নামলেন গ্রামেরই কয়েকজন যুবক।
তাঁদের প্রস্তাব, লটারি করে দুর্গাপুজো করা হোক। তারপর যেমন ভাবা তেমন কাজ। লটারি নিয়ে বাড়বাড়ন্ত ও বাঙালির কম নয়। টিকিট ছাপার পর বেশিক্ষণ লাগেনি ফুরিয়ে যেতে। হিসেব বলে, প্রায় দু’শো পঞ্চাশ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল, যা ওই বাজারে অনেক বেশি। ঠিক হল, লটারিতে যিনি প্রথম হবেন, তাঁর নামেই পুজোর সংকল্প হবে। ওই টাকা দিয়েই শেষ পর্যন্ত শিবপুরে হয়েছিল দুর্গাপুজো। আর এইভাবেই অভিনবত্বের নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটেছিল। জাত-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে সকলেই উৎসবের দিনগুলিতে সামিল হন। পুজোর মণ্ডপগুলিতে সমস্ত রকমের মানুষের ভিড় দেখা যায়। দুর্গাপুজোর মধ্যে রয়েছে ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’-র ছোঁয়া। আর এমন পুজো বাঙালি তো মনে রাখতে বাধ্য বটে!
Discussion about this post