পেটে যার জিলিপির প্যাঁচ, সে মানুষ না পসন্দ। তাতে কী! পেটে যদি পড়ে প্যাঁচের ওই মিষ্টিখানা! জমে যায় জিভ লালসা। তুরস্কে প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল জিলিপি। সেখান থেকে টিউনেশিয়া। তারপর মুঘল রসুইখানা ঘুরে সোজা বাংলার মিষ্টান্ন ভান্ডার। মেলায় গিয়ে জিলিপির রসে মন ডোবায়নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। বহুরকম হয় এই জিলিপি। কখনও ময়দা ও চিনির মিশেল। কখনও মুগের ডাল, কখনও ছানা। বাঙালিকে সে রসালো আনন্দ দেয় প্রতিটি প্যাঁচের ভাঁজে। এহেন জিলিপিদের ভিড়ে বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ মুগের জিলিপি। হাউড় অথবা পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল। স্বাদ ও বর্ণের বাহারে মুগের জিলিপির পীঠস্থান এটি।
মুগের জিলিপিতে নেই আড়াই প্যাঁচ। এক প্যাঁচেতেই এটি কাবু করে ফেলে বঙ্গরসনার গগনচুম্বী চাহিদা। এদের প্যাঁচ আবার ভীষণ লাজুক। দুটি মুখ পরস্পরের কাছে এলে গুটিয়ে নেয় নিজেদের। পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল অঞ্চল। মুগের জিলিপির উৎস সন্ধানে বেরোলে এই নামটাই আগে আসে। তখন নাড়াজোল রাজবাড়ির জমিদারিত্বে প্রচুর উর্বর জমি ছিল। মুগ কলাইয়ের চাষ হতো ভীষণ। সহজলভ্য সেই কলাই মিষ্টি রসের সাথে জোট বেঁধে জনপ্রিয় হয়। রাজবাড়ির রসুইখানাই এর উদ্বোধক। অনেকে বলেন পাঁশকুড়ার কাছাকাছি যে হাউড়, সেখানেই নাকি প্রথম উৎপত্তি হয় এর। জনৈক পুলিনবিহারী ভৌমিক এর জনক। এছাড়াও কেশপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায় এই মিষ্টি। পাঁশকুড়া ও হুগলীর চন্দননগরে এই জিলিপির বেশ খ্যাতি আছে।
মুগের জিলিপি তৈরী করতে লাগে মুগডাল, চিনি ও ঘি। প্রথমে বেটে নেওয়া হয় ডাল। তারপর ভালো করে ফেটানো হয় তা। স্বাদু জিলিপির মূল রহস্য কিন্তু লুকিয়ে আছে ফেটানোর সময়কালে। ফেটিয়ে বানানো হয় খামি। এই খামি যদি জলে ভাসে তবে তা সুস্বাদু জিলিপি বানাতে সক্ষম। খামি পড়ে থাকে সারারাত খোলা আকাশের নীচে। মাটির মালসায় কাপড় ঢাকা হয়ে। পরেরদিন তা ঘি বা তেল দিয়ে ভাজা হয়। তারপর চিনির রসে ডুবলেই তৈরী মুগের জিলিপি। চিনির রসে মেশানো কেশর দেয় জিলিপির গাঢ় হলুদ রঙ। অনেকসময় স্বাদ বাড়াতে জিরে বা মৌরিও দেওয়া হয়। দামেও আছে সহজলভ্যতা। প্রতি পিস পাঁচ টাকা। মেদিনীপুর জেলার অন্যতম আকর্ষণ এই মিষ্টি। রসের আবেশে বাঙালির জিভে বিপ্লব ঘটাবেই এ মিষ্টি।
Discussion about this post