খাস হাওড়ার বুকেই তৈরী হচ্ছে বোমা। তৈরি শেষে তা বিক্রি হয় জনসমক্ষে। আবার সেই বোমা অল্প সময়ের মধ্যেই হয়েও যায় শেষ। শুনতে অবাক লাগলেও এই ঘটনা হাওড়ার নিত্যদিনের। তবে এই বোমা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না, বরং মানুষের মনকে স্বাদের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত চন্ডীবাবুর দোকানে তৈরী বোমা চপের সুখ্যাতি আজও সারা হাওড়া জুড়ে।
জানা যায়, রামমোহন মুখার্জি লেনের চন্ডীবাবুর এই দোকান স্থাপিত হয় ১৯১১ সালে। মন্দিরতলা থেকে ডানদিকে শিবপুর বাজার ঢোকার মুখেই এই দোকান। রামমোহন মুখার্জি লেনের এই আদ্যিকালের পুরনো দোকানে প্রতিদিনই লাইন পড়ে যায় দোকানের বাইরে। বোমা তৈরির অপরূপ গন্ধ যেন এক সম্মোহনী শক্তির কাজ করে পথচলতি সাধারণ মানুষদের কাছে। বাবার শুরু করার ব্যবসা চন্ডীবাবু এগিয়ে নিয়ে এসেছেন সমান দক্ষতায়। তবে বয়সের ভারে তিনি আজ ন্যুব্জ। ফলে বর্তমানে দোকানটি চালান চন্ডীবাবুর ছেলে। বোমা চপ তৈরির জন্য চন্ডীবাবুর দোকান বিখ্যাত হলেও, এখানে আরও পাওয়া যায় বিদেশী সসেজ আকৃতির বোমা, কড়ে আঙুল সাইজের লঙ্কার চপ, বরফি স্টাইলের ডালের বড়া, মোচার চপ, হাতের তালুর মতো বেগুনি, পেঁয়াজি, কপির চপ, ডিমের ডেভিল, পটলের বড়া এবং আরও নানান তেলেভাজা। চন্ডীবাবুর তেলেভাজার টানে শুধু হাওড়া নয়, আশেপাশের বহু জায়গা থেকে খাদ্য প্রেমীরাও আসেন এই ভাজার স্বাদ নিতে।
শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলেও চন্ডীবাবুর বোমার বেশ সুখ্যাতি ছিল। হাওড়ার স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও নাকি আসতেন চন্ডীবাবুর বাবার থেকে বোমা নিতে। ব্রিটিশ পুলিশেরা একবার চন্ডীবাবুর বোমাকে বিপ্লবীদের বোমা ভেবে চন্ডীবাবুকে গ্রেফতার করতে আসে। তবে এসে এই বোমা খেয়েই তারা ফেরৎ চলে যান। এই বোমা চপের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন স্বয়ং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মাঝে মাঝেই তিনি আসতেন এই বোমা চপ খেতে। আর এই বোমার স্বাদেই অভিভূত হয়ে শরৎচন্দ্র লিখেছিলেন- “স্বাদে ও গন্ধে অতি উপাদেয়, অরুচির রুচি করে, ইহাতেই মন ভরে। স্বাধীন দেশে যদি জন্মাত বোমার জন্মদাতা, যশ মানে দেশ ভরে যেত, বরণীয় হতো হেথা।”
Discussion about this post