বাঙালি ও মিষ্টি এ দুই যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। হবে নাই বা কেন? মিষ্টির রাজা সেই রসগোল্লা থেকে শুরু করে সন্দেশ-রসমালাই সৃষ্টি, সবই বাঙালির অনবদ্য কীর্তি। কিন্তু জমিয়ে ভুরিভোজের পর একটি জিনিস না থাকলে বাঙালির খাবার যেন শেষ হয় না। আর তা হল,দই। দই বাঙালির আতিথেয়তার অভিন্ন অঙ্গ। তবে আমরা যদি ভেবে নেই দইয়ের উৎপত্তি এ মাটিতেই তাহলে ভুল! এই খাবারটির বয়স চার হাজার বছর। দুধ ও ব্যাকটেরিয়ার জমজমাট কেমিস্ট্রিতে তৈরী খাবারটির তৈরী এই দেশই নয়, এই মহাদেশেরও বাইরে। দইয়ের জীবাণুর নামটা কী জানেন? ‘ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগেরিকুশ’। নামেই তো জায়গার জানান দিয়ে গেল। ‘বুলগেরিয়া’ – যেখানে দই ছাড়া জীবন যাপন সেখানকার মানুষজন স্বপ্নেও ভাবেন না।রাজধানী সোফিয়ার বাসিন্দা নিকোলা বলেন, “আমরা সবকিছুতে দই ব্যবহার করি। নিজে যেমন প্রতিদিন তিন পাত্র দই খাই। সকালে জলখাবারে, দিনে স্ন্যাকসের সঙ্গে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।”
তা এই বুলগেরিয়ায় দই এল কীভাবে? এখানকার বহু মানুষের দাবি, প্রায় চার হাজার বছর আগে যাযাবর জাতি ‘নোমাডিক’দের হাত ধরে এ দেশে দইয়ের উৎপত্তি। সেটা অবশ্য দুর্ঘটনাক্রমে যদিও। ‘নোমাডিক’রা দুধ বহন করত প্রাণীর চামড়া দিয়ে বানানো থলেতে। যা ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ এবং সেই ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে গাঁজন প্রক্রিয়ায় থলেতে রাখা দুধ দই হয়ে যেত। ঐতিহাসিকদের মতে, সমসাময়িককালে আরও কিছু অঞ্চলে দইয়ের উৎপত্তি ঘটলেও দইয়ের রহস্য উদঘাটন করেন বুলগেরিয়ার বিজ্ঞানী ড. স্টামেন গ্রিগোরভ। পরীক্ষাগারে দই নিয়ে এক বছর চর্চার পর তিনি আবিষ্কার করেন, গাঁজন প্রক্রিয়ায় দুধ থেকে দই হতে ঠিক কোন ব্যাকটেরিয়া দায়ী। গ্রিগোরভ এবং বুলগেরিয়ানদের সম্মানে সেই জীবাণুটির নাম রাখা হয়—‘ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগেরিকুশ’ গ্রিগোরভের এই আবিষ্কারকে সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্মভূমি বুলগেরিয়ার ত্রার্নে অঞ্চলে পৃথিবীর একমাত্র দই বিষয়ক জাদুঘর তৈরী করা হয়!
আরও পড়ুন স্বাদের আসরে মনকাড়া নবদ্বীপের লাল দই, আদরে-আপ্যায়নে আজও বিশ্ব সেরা!
সবশেষে বাঙালির জীবনে দইয়ের মর্ম বোঝাতে শমীকবাবুর কবিতার এই অংশটি না বললেই নয়-
“সাত সকালে কিনে আনা দই মিষ্টি র হাড়ি,
জামাই বেশে ঘোষ দাদা গেলেন শ্বশুর বাড়ি।
রূপোর থালায় সর্ষে ইলিশ,তেল মশলার কই,
কচি পাঠা,গলদা চিংড়ি,শেষ পাতে তে দই।।”
Discussion about this post