পাঁউরুটিতে চিনির সঙ্গে মাখনই হোক অথবা গরম ভাতে আলু সেদ্ধর সঙ্গে এক চামচ মাখন – আহ! স্বাদই অন্যরকম হয়ে যায়! এমনিতেই ব্রেকফাস্ট হিসেবে পাউরুটি-মাখনের চল এখন বলা যায় ঘরে ঘরে৷ ব্যস্ততার দিনগুলোতে বানাতেও সহজ, আর খেতেও৷ এখন মাখন বলতে প্রথমেই যে ছবিটা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হল আহ্লাদী কচি একটা মেয়ের ছবি দেওয়া প্যাকেটে বিক্রি হওয়া আমূল বাটার। গলাকাটা দামও যত দিন যাচ্ছে আরও বেড়ে চলেছে। কিন্তু দাম বাড়লেও আগেকারের সেই বহুল প্রচলিত সাদা মাখনকে টেক্কা দেওয়ার মতো নির্ভেজাল স্বাদ কিন্তু এখনকার ‘ বাটার’-এ পাওয়া যায় না।
বাবা-ঠাকুরদাদের সময়ে সাদা মাখনের জনপ্রিয়তাই ছিল আলাদা। চলতি ভাষায় যাকে বলে ‘মাখম’। সে সময় কলাপাতা মুড়ে বিক্রি হত আখছার দোকানে। অদ্ভুত ছিল কাটি আটকানো সে মোড়ক। একটা টাটকা কোয়ার্টার পাউন্ড পাঁউরুটি কেটে মাঝখানে পুরু করে সাদা মাখম মাখিয়ে তাতে চিনি ছড়ানো- আহা! তার যে কী স্বাদ তা বলে বোঝানোর নয়। দামেও ছিল পাঁচ নয়া থেকে চারআনা অবধি- এর কম বৈ বেশি তো নয়ই। টাটকা পাঁউরুটির সাথে সাদা মাখন ছিল বিলাসিতা। আধুনিক কালের ‘ব্রেড-বাটার টোস্ট’ তার কাছে খুবই নগণ্য।
এখনকার বাজারে চলতি মাখনে যতই বলা হোক ক্যালোরি কম বা নেই, তাতে আসলে সিন্থেটিক চর্বি থাকে যা ওজন বাড়ায়। কিন্তু সাদা মাখনে থাকে স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি, যা সুস্থ শরীর ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এমনকি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে। অর্শ রোগে ওই সাদা মাখনের অব্যর্থ ঔষধি গুণও আছে, কালো তিল সহযোগে। দুধের ক্রিমটাকে ঘন করে ফেটিয়ে তৈরি করা যায় এই সাদা মাখন। এখনকার মাখনের তুলনায় এই সাদা মাখন স্বাস্থ্য ও স্বাদ – দু’দিক দিয়েই ফেল করবে তা বলাই বাহুল্য।
তাহলে, পুরনো স্বাদ ফিরে পেতে মনটা আনচান করছে তো? কিন্তু উপায় কী! আধুনিকতার নিয়মই হল পুরনো জিনিসকে সরিয়ে নতুনদের জায়গা করে দেওয়া। তেমনই সাদা মাখনকে সরিয়ে এখন দোকানে জায়গা করে নিয়েছে হলদে মাখন। আস্তে আস্তে হাওড়া-কলকাতার বুক থেকে হারিয়ে গিয়েছে কলাপাতার মোড়কে ঢাকা সেই সুস্বাদু সাদা মাখন। তবে কলকাতা বা হাওড়ার হাতে গোনা কয়েকটা দোকানে খুঁজলে পাওয়া যেতেও পারে সাদা মাখন। পুরনো নস্টালজিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনও শালপাতায় মুড়ে বিক্রি হয় শৈশবের হারিয়ে যাওয়া সাদা মাখন।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – bdnews24.com
Discussion about this post