সে মোটামুটি তিন দশক আগের কথা। ঠেলা গাড়িতে একটা মানুষ কচুরি বিক্রি করে জোগাড় করতেন পেটের ভাত। আজ্ঞে না, তখনও কেউ ভাবেনি ইতিহাসের শহর, অক্ষরের শহর শ্রীরামপুরে কচুরিয়ানার রসনা সংবিধানে শিবুদার কচুরি একটি ধারা হয়ে উঠবে। প্রাক্তন ডেনিশ উপনিবেশের পাশের গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। শ্রীরামপুরে এখন মানুষের ভিড়ের চেয়েও বেশি নামীদামী ব্র্যান্ডের ভিড়। আর সেই ভিড়ে নিজস্বতার ছাপটা ইতিমধ্যেই মেরে দিয়েছেন শিবুর টিফিন হাউস। এক কথায় শ্রীরামপুরবাসীর ভাষায় শিবুদার কচুরি।
মূলতঃ হিংয়ের কচুরির জোরেই তথাকথিত ‘ব্র্যান্ড’ না হয়েও লোকের মুখে ভাসতো শিবুর কচুরির নাম। শ্রীরামপুরবাসীর কচুরির কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে উঠত শিবুদার কচুরি। যারা এই কচুরির মাহাত্ম্য জেনেও কচুরি কিনবেন না বলে ঠিক করতেন, তাদের সামনে দুটি রাস্তা থাকত। হয় শিবুদার দোকান এড়িয়ে সেই লোভনীয় কচুরির গন্ধ এড়িয়ে যাওয়া। অথবা অই গন্ধ শুঁকে ‘ঘ্রাণেন অর্ধভোজনাং’ করে ফেলা। আজ পর্যন্ত নিয়মিত শিবুর দোকানের কচুরি খেয়েও শারীরিক অসুস্থতার অভিযোগ বিরল।
জানা গিয়েছে ক্রেতার সাথে কচুরির দাম সংক্রান্ত ঝগড়ায় জড়ানোই শিবুর কাল হল। সেই ঝামেলার জেরেই গত শুক্রবার উদ্ধার হয় কচুরি বিক্রেতা শিবুদার মৃতদেহ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়না তদন্তের পরেই হয়ত সামনে আসবে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। এককালীন ডেনমার্কের উপনিবেশের বাসিন্দাদের রসনা এরপরেও হয়তো শিবুদার কচুরি বিলাসের কাছে পরাধীন থাকতেই গর্ববোধ করবে। তবে অকালে রসনার বাসনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আক্ষেপটা চিরকালীন হয়েই থেকে যাবে মনে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – সন্দীপ সাহা, খাদ্য রসিক বাঙালি
Discussion about this post