মোমো’ শব্দটির অর্থ হল ‘মাংসে ভরা ভাপা ময়দার পুডিং বিশেষ’। এটি তিব্বতী খাবার। মোমো তিব্বত ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভারতেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রথাগতভাবে এই খাদ্য তৈরির সময় চমরী গাইয়ের মাংসকে পুর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ভারতে মুরগি ও মোষের মাংস দিয়ে তৈরি মোমোই বেশি জনপ্রিয়। আমিষ মোমোর পাশাপাশি নিরামিষ মোমো’ও হয়ে থাকে। মোমোর ইতিহাস বলতে গেলে অনেককিছু বলতে হয়। মূলত তুলাধর জাতির মধ্যে মোমো প্রথম ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নেওয়ার ব্যবসায়ীরাই তিব্বত থেকে এটি প্রথম ক্রয় করে আনে। পরবর্তীকালে তারা নিজেরাই রন্ধন প্রক্রিয়াটি একটু পরিবর্তন করে নেয়। যেহেতু নেপালে মহিষ সহজলভ্য, তাই তারা মোমোর পুর হিসাবে মহিষ মাংসের কিমাই সর্বদা ব্যবহার করত। যদিও এটি নেপালের ব্রাহ্মণ ও ছেত্রী সম্প্রদায়ের কাছে নিষিদ্ধ ছিল।
নেপালের জন-আন্দোলনের পর পরই ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত নেওয়ার সম্প্রদায়ের কাছে এটি অন্যতম জনপ্রিয় প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হত। ২০১৮ তে এসে এই মোমো আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ আমাদের দেশের আনাচে কানাচেও প্রবেশ করে গেছে। একটি দেশের কোনো লোকাল খাবার সাধারণত এতটা জনপ্রিয়তা পায়না, যতটা এই মোমো পেয়েছে। বলতে গেলে এটি এখন বিশ্বের প্রায় ৬০% দেশেই পাওয়া যায়। চিনা নাম ‘জিয়াওজি’। স্টার্টার হিসেবে ‘ডিমসাম’ বা এক কামড়ে কপ করে খেয়ে ফেলার জন্যই এর প্রসিদ্ধি। ‘মোমো’ শব্দটা প্রধানত চিন থেকে ধার নিয়েছে নেপালিরা। এখন সারা বিশ্বে তিব্বতি ও নেপালি ডেলিকেসি হিসেবেই এর খ্যাতি। কলকাতায় মোমো প্রচার পেয়েছে বহু পরে। খাবারের আবার ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান অনেকটা আমিষ-নিরামিষ! দুই রকমই করা যায় মোমো।
কীভাবে ‘ওয়াও মোমো’ হয়ে উঠল একটি জনপ্রিয় ‘ব্র্যান্ড’?
মোমো কীভাবে বানানো হয় বললে প্রকার বুঝতে পারবেন। এটা ময়দার লুচির মত বানানো হয় ছোট ছোট। তার ভেতরে পুর ভরা হয়। এবার ওই পুরের ওপর সব নির্ভর করে আপনি প্রকারভেদ করতে পারবেন। মাংসের পুর দিলে আমিষ (কোন পশু বা পাখির মাংসের তৈরি তার ওপর আবার প্রকার পাবেন; তিব্বতে প্রধানত চামরী গাইয়ের মাংস দিয়ে বানানো হতো, আপনি যা খুশি দিয়ে বানাতে পারেন), আবার সবজির পুর দিলে নিরামিষ। মোমো বানানোর জন্য মাকটু নামক একটা বাসন ব্যবহার করা হয়। মোমো সাধারণত গরম গরম সুপ এবং মিষ্টি ও ঝাল সসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। ভেজ বা চিকেনের পুর দেওয়া সেদ্ধ মোমো ছাড়াও প্যান ফ্রায়েড মোমো, চিজ মোমো, পনির মোমো, আলু মোমো ইত্যাদি নানা ধরনের মোমো পাওয়া যায়। খাদ্য রসিক মানুষকে ক্রমশঃ বশ করেছে এই মোমো। বেড়েই চলেছে এর জনপ্রিয়তা। বঙ্গে যে দিকেই তাকানো যায় মোমোর দোকান দেখা যাবেই। এই নিয়ে নেই কোনো সংশয়।
Discussion about this post