ভোজনরসিক বাঙালির গ্রীষ্মকালীন পছন্দের খাবার আম। আম পছন্দ নয়, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ‘মুশকিল হিসেবে নেহি, নামুমকিন হে’। কাঁচা আমের ডাল, আঁচার থেকে শুরু করে পাকা আমের আমসত্ত্ব, জুস, দুধ-আম সহ রকমারি সুস্বাদু জমজমাট আমের রেসিপি যেন ভুলিয়ে দেয় গরমের কষ্ট। তবে আমের তৈরী অভিনব রেসিপি আমের জিলিপি চেখে দেখেছেন কখনও? তাও আবার কাঁচা আমের? অবাক করা এই খাবারের উদ্ভব বাংলাদেশের রাজশাহীতে।
দেশভাগের পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা আর ভারতের মালদা জেলা ছিলো একসাথে। সেই সময় থেকেই এই দুই জায়গার আমের খ্যাতি সারা বিশ্বজুড়ে। তবে আমের জিলিপি রাজশাহীর ঐতিহ্যের মুকুটে এক উজ্জ্বল পালক। রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টির দোকান ‘রসগোল্লা’ প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাফাত রুবেল এই মিষ্টির প্রতিষ্ঠাতা। এর আগেও আমের মিষ্টি, খেজুর রসের মিষ্টি ও মাসকলাইয়ের জিলিপির আবির্ভাব ঘটেছিল রুবেলের হাত ধরেই। আগে রাজশাহীতে আমের মৌসুমে প্রচুর পরিমানে কাঁচা আম পড়ে নস্ট হত। তবে বর্তমানে সেই কাঁচা আম এখন জিলাপি তৈরিতে কাজে লাগে। রাজশাহী শহরের ভদ্রা এবং উপশহর নিউমার্কেট এলাকায় দুটি দোকানে কাঁচা আমের জিলাপি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকার কাছাকাছি হলেও প্রসিদ্ধ ‘রসগোল্লা’ দোকানে এই জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি।
নতুন এই জিলাপির কারিগর মাসুম আলী জানান, “ময়দা, চালের গুঁড়া, চিনি, কর্নফ্লাওয়ার, বেকিং পাউডার, ভিনেগার, জাফরান, তেল, গোলাপ জল ও এলাচের গুঁড়া ভালো মতো মিশিয়ে ব্লেন্ড তৈরী করা হয়। তারপর ব্লেন্ডের সাথে মেশানো হয় কাঁচা আম। এরপর তা ভাজা হয় গরম তেলে। অবশেষে মিষ্টি সিরায় ভিজিয়ে রেখে পরিবেশন করা হয় গরম গরম। সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি হয় এটি।”
তবে শুধু রাজশাহী নয়, আশপাশের জেলার মানুষ রাজশাহী এলেই কৌতূহলে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই জিলাপির স্বাদ নিতে। আরাফাত রুবেলের মতে, “ইফতারিতে ভিন্নতা আনতে প্রথম রোজা থেকেই কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, সব সময় ভিড় লেগেই থাকে।” কাঁচা আমের এই জিলিপির মধ্যে লুকিয়ে থাকে আমের সুমধুর ঘ্রাণ। যা মুখে দিলেই হারিয়ে আপনি যাবেন আমের রাজ্যে।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – মহম্মদ সাইফুল ইসলাম
Discussion about this post