প্রথম ইনিংসের লকডাউন ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম পর্যায়ের লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভয়াবহ অবস্থা আমাদের কানে এসেছে। লকডাউনের ফলে অধিকাংশ শ্রমিকের কাছে একদিকে যেমন সুস্থ স্বাভাবিক বাসস্থান নেই। ঠিক তেমনই অন্যদিকে মজুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দৈনিক খাদ্য জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার ফলে তারা নুন্যতম সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ সরকারের অপদার্থতার ফলেই কাজ না থাকায় শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে কাজ খুঁজতে যেতে হয়েছিল। দেশভাগের পরে এত বড় ভুখা মানুষের মিছিল ইতিহাসে খুব কম দেখা গেছে। কাজ চলে যাওয়া এবং ধরা পড়ার ভয়ে সেই সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ পায়ে হেঁটে নিজের গ্রামে ফিরেছিলেন। এই দীর্ঘ লকডাউনের ফলে ইতিহাসই ফিরে আসছে। চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করা লক্ষ লক্ষ মহিলা শ্রমিক তাঁদের কাজ হারিয়েছেন। ফলে তাঁরা আরও বেশি করে দারিদ্র্যের অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন। মহিলা পরিযায়ী শ্রমিকদের মাথায় আজ না আছে ছাদ, না আছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যথেষ্ট জোগান।
একদিকে যখন গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান সহ একাধিক রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন। উত্তরপ্রদেশের সরকারের করোনা আটকানোর নামে শ্রমিকদের গায়ে রাসায়নিক ছড়িয়ে বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে। তার থেকে এটি পরিষ্কার যে সরকারের কাছে গরীব শ্রমিকের জীবনের কোন দাম নেই। তাঁদেরকে বাঁচানোর কোন পরিকল্পনাও সরকারের হাতে নেই। ভারত সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে সরকার সমাজে অর্থনৈতিক শ্রেণী বৈষম্য কমাতে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতির গ্রাফ শেষ কয়েক বছরে ঊর্ধ্বমুখী হলেও গরীব ও প্রান্তিক মানুষের জীবন যাত্রার নুন্যতম উন্নতি হয়নি। ফলে এই অসাম্যের সমাজে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনীতিক সংকট সমাজের প্রতিটি কোণা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের গরীব মানুষের প্রতি অবহেলা ও তাঁদের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফায়দা লুটছে পুঁজিপতিরা। তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো জরুরি পরিষেবাকে পণ্য হিসেবে বিপুল মুনাফা বানানোর কারখানায় পরিণত করেছে।
সরকার মহামারী রুখতে বাইরে যাতায়াতে ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং সামাজিক দুরত্ব পালন করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে না আছে সঠিক বাসস্থান না আছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বা ওষুধ। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের ছোট জায়গায় একসাথে অনেককে থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিপুল খাটনি এবং শ্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আহার না থাকার ভারতের বেশিরভাগ গরীব মানুষ অপুষ্টির শিকার। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক মারা যাবেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যদিও সরকার ঘোষণা করেছে এই লকডাউনে কোন শ্রমিক কাজে আসতে না পারলেও তাঁকে তাঁর প্রাপ্য মজুরি দিতে হবে। যদিও এই নির্দেশের বাস্তবায়নের কোন সম্ভাবনা যে নেই তা ইটভাটা সহ একাধিক ক্ষেত্রগুলির দিকে তাকালেই পরিস্কার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চা বাগান সংগঠিত ক্ষেত্র হলেও গত ২৪ মার্চ থেকে তাঁদের দৈনিক মজুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠিত ক্ষেত্রে এবং সরকারী অফিস যেমন পৌরসভা, পঞ্চায়েত, মহকুমা শাসক, সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সহ একাধিক ক্ষেত্রে চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিক নেওয়া হয়। প্রধানত এই ক্ষেত্র গুলিতে অধিকাংশই মহিলা শ্রমিক। এই দীর্ঘ লকডাউনের ফলে তাঁরাও চাকরি হারাচ্ছেন। তাই লকডাউন পরবর্তী সময় বেকারের হাহাকারে আকাস বাতাস যে মুখরিত হয়ে উঠবে তা আন্দাজ করাই যায়।
লেখকের মতামত একান্তই ব্যক্তিগত, এর সঙ্গে ‘ডেইলি নিউজ রিল’ গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
Discussion about this post