কথায় বলে নতুন কিছু শেখার, নতুন কাজ শুরু করার বা নতুন স্বপ্ন দেখারও কোনো বয়স নেই। প্রয়োজন শুধু উদ্যম আর ইচ্ছা। তা সে এভারেস্টে চড়া হোক, বা পড়াশোনা শেখা হোক, সাঁতার কেটে রেকর্ড ভাঙা হোক বা সিঙাড়া বানানো হোক। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ সিঙাড়া বানানোর কথাই বলছি। বাংলার ৮৬ বছরের বৃদ্ধা সিঙাড়া বানিয়েই ছোট বড় সকলের মন জয় করেছেন। তাঁর নিজের হাতে বানানো সিঙাড়ার দাম? মাত্র আড়াই টাকা। ঠিকই শুনেছেন, ২.৫০ টাকা!
কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমার বাসিন্দা সিঙাড়া দিদা। তাঁর আসল নাম সুরবালা মন্ডল। প্রায় ৪০ বছরের পুরনো তাঁর খাবারের দোকান। সেখানে সিঙাড়া ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবার মেলে। কিন্তু তাঁর সিঙাড়াই সবচেয়ে জনপ্রিয়। মুড়ি-মুড়কির মত বিক্রি হয় প্রতিদিন। আজকের চড়া দামের বাজারে যেখানে খাবারের দাম আকাশচুম্বী, সেখানে সুরবালা দেবীর সিঙাড়ার দাম একেবারে হাতের নাগালে। প্রথমে ঘর চালানোর জন্য এই ব্যবসা শুরু করলেও, আজ তিনি নিজের মনের আনন্দের জন্য কাজ করেন, দোকান চালান। খদ্দেরকে খাইয়ে তাঁর মুখে দেখা যায় ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসি।
ইদানিং চোখের দৃষ্টিও অনেকটা কমে এসেছে। গরমের আঁচে তেলেভাজা তৈরি করতে বেশ কষ্টই হয়। সাহায্য করেন ছেলে। কিন্তু এসবও তাঁকে দুর্বল করতে পারেনি। উলটে তিনি বলেন, “ঘরে বসে থাকলে শরীর অকেজো হয়ে যাবে। কদিন আর বাঁচব? শরীরকে যতদিন কাজের মধ্যে রাখা যায়, ততই ভালো। আমি শেষজীবন পর্যন্ত মানুষকে খাইয়ে যেতেই চাই।’’ তবে যে সিঙাড়া দিয়ে তিনি সকলের কাছে পরিচিত হয়েছেন ‘সিঙাড়া দিদা’ নামে। সেই সিঙাড়া বানানোর কাজটি তিনি করেন সম্পূর্ণ একাই।
তুফানগঞ্জের বাইরেও তাঁর দোকান আর কাজের গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। বাইরে থেকেও বহু মানুষ তাঁর গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে সিঙাড়া নিতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সুরবালা দেবীর এই বয়সের উদ্যম অবাক করে, বিস্মিত করে। শোনা যায়, কেউ যাতে পেটে খিদে নিয়ে তাঁর দোকান থেকে ফিরে না যায়, সেই দিকে কড়া নজর রাখেন সুরবালা দেবী। কারো কাছে টাকা পর্যাপ্ত না থাকলেও, তিনিও খাবার থেকে বঞ্চিত হন না।
Discussion about this post