বাঙালি যেমন আর শুধুমাত্র বাংলায়, বা বাংলাদেশে আবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। তেমনই বর্তমানে দুর্গা পুজোর মত প্রাচীন মহোৎসবও আর শুধুমাত্র বাঙালির মধ্যে আবদ্ধ নেই। এটি হয়ে উঠেছে সব ধরনের, সব ধর্মের মানুষের মিলনোৎসব। বাংলাসহ সব স্থানেই বাঙালি তাদের শাস্ত্রসম্মত উপাচার দিয়ে আয়োজন করেছে পুজো। আর তাদের নিজস্ব প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন অন্য সংস্কৃতির মানুষ। তবে, আজ অন্য দেশ বা অন্য ভাষার মানুষের কথা নয়, বরং কথা হবে আমাদের প্রতিবেশী দেশের বাঙালির পুজো নিয়েই। বাংলাদেশের দুর্গোৎসব উদযাপনের ইতিহাসটিও বেশ প্রাচীন।
বাংলাদেশ মূলত ইসলাম ধর্ম প্রধান দেশ, কিন্তু সারা বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দু বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোগুলির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। তেমনই একটি পুজো হল লাল ব্রাদার্স বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজো। জানা যায় সিলেটে অবস্থিত এই বনেদি পুজো শুরু হয়েছিল ১৮১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। এই বছর পূর্তি হবে তাদের পুজোর ২০৯ বছর। পারিবারিক পুজোগুলিতে সাধারণত শাস্ত্রাচার পালনের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়। এই লাল ব্রাদার্স বনেদি বাড়ির পুজোতেও তার অন্যথা হয়না। পুজো উপলক্ষে এই বাড়িতে এখনো আত্মীয়-সমাগম হয়ে থাকে। সাধারন মানুষের ভিড়ও কম হয়না।
লালব্রাদার্স বাড়ির বংশধরেরা ছিলেন কাশ্মীরের বণিক সম্প্রদায়। কাশ্মীর থেকে মুর্শিদাবাদ, এবং সেখান থেকে নবাব সিরাজদোউল্লার আমলে তাঁরা চলে আসেন সিলেটে। সেখানেই প্রথম পুজোর শুরু হয়েছিল। জন্মাষ্টমীর পর থেকেই প্রতি বছর শুরু হয়ে যায় দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমা হয় একচালা। ডাকের সাজে দেবী প্রতিমার পুজো করা হয়ে থাকে। যখন এই পুজো শুরু হয়েছিল, সেই সময় পুজোর পুরোহিতের সংখ্যা ছিল আট থেকে দশজন। তাঁরা বেশিরভাগই আসতেন ভারতের উড়িষ্যা থেকে। এখন সেই জৌলুস কমলেও বনেদিয়ানার রাজকীয়তা বহাল আছে।
সিলেটসহ বাংলাদেশের বনেদি পরিবারগুলি দুর্গোৎসব উদযাপনের জন্য রীতিমতো অপেক্ষার প্রহর গুনতেন। শেখঘাটের এই ‘লাল ব্রাদার্স’ বাড়ি সেই জায়গা থেকে প্রাচীনকাল থেকেই সম্মানীয় ছিল। নামজাদা পরিবারের পুজোয় আভিজাত্য এবং বংশপরম্পরায় পুজোর আয়োজন ছিল বাধ্যতামূলক। সেই বংশপরম্পরার পুজোর ধারাবাহিকতা আজও চলমান। পুজো উপলক্ষে এই বনেদি বাড়িতে ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক খ্যাতিমান মানুষও নিমন্ত্রিত হয়ে আসতেন।
Discussion about this post