রাজা আর রাজ্যপাট কোনোটাই আজ আর আগের মতো নেই। সুপ্রাচীন জমিদার বাড়িগুলি একে একে চলে আসছে সরকারি নিয়ন্ত্রনে। কলকাতা থেকে একটু দূরেই উঃ চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত ধান্যকুড়িয়া। যেখানে আজও তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে ইতালিয়ান স্থাপত্যের জমিদার বাড়ি। যা কিনা ইতোমধ্যেই নথিভুক্ত হয়েছে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে।তবে এ গ্রামে যেটা সবচেয়ে পুরনো তা হলো প্রায় ২০০ বছরের পাটের ব্যবসা। এ বাড়ির পাটের ব্যবসা সেকালের নিদর্শন বলা যেতে পারে। বসিরহাটের প্রাচীন জায়গাগুলোর মধ্যে ধান্যকুড়িয়া অন্যতম। রাস্তা জুড়ে বিশাল ফটক, দুপাশে বৃত্ত স্তম্ভ। তার মাঝে ধনুকাকৃতি বিরাট ছাদ, যার মাথায় কোনো এক সাহেবের ছোরা দিয়ে সিংহ বধের মূর্তি। পুরো ভিক্টোরিয়ান গড়নে তৈরি এই রাজবাড়ি যেনো স্বপ্নরাজ্য। ধান্যকুড়িয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ‘গায়েন বাড়ি’।
সেসব জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় আড়াইশো বছর আগে। ইতিহাস বলছে আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর আগে জমিদার মহেন্দ্রনাথ গায়েন তৈরি করিয়েছিলেন এই রাজবাড়ি। সেই থেকে এ বাড়ি ‘গায়েন বাড়ি’ নামে পরিচিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য সে সময়ে রাজবাড়ির জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। জমিদারদের সাথে সাহেবদের সম্পর্ক ভীষণ ঘনিষ্ঠ না হলেও শত্রুতা ছিল না। রাজবাড়ির পাটের ব্যবসা তাই চলতো রমরমিয়ে। মূলতঃ ইংরেজদের সাথেই চলতো লেনদেন, যার ফলে ব্যবসা বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছিলো। আর বলাই বাহুল্য, এ সমস্ত কারণে উঃ চব্বিশ পরগনার এই প্রান্তে লেগে থাকতো সাহেবদের আনাগোনা। তবে গায়েনদের পাশাপাশি সাউ আর বল্লভদেরও ছিল পাটের ব্যবসা। যার কোনোটাই আর আগের মতোন নেই।
তবে সে সময় আর আজকের দিনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ব্যবসার পাঠ চুকে গেছে অনেককাল আগেই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে রাজবাড়ি। ২০০৮ সালে সরকারের আওতায় আনা হয় এই রাজবাড়িকে। গড়ে ওঠে অনাথ মেয়েদের হোম। সিংহ মূর্তির একটি চুরি যায় অনেক দিন আগেই, আর আরেকটি সিংহ মূর্তি চড়া দামে বিক্রি করেন মহেন্দ্রনাথের উত্তরসূরীরা। বর্তমানে এই রাজবাড়ি পেতে চলেছে ‘হেরিটেজ’ তকমা।
Discussion about this post