বইমেলা হাজির হয় কত শত গল্পের ঝুলি নিয়ে। কখনো হার না মানার গল্প। কখনো অদম্য লড়াই, ইচ্ছে শক্তির গল্প। কিছু গল্পতে মেশানো কল্পনা, আবার কারোর উপাদানে শুধুই বাস্তবের ধুলো। সেই বাস্তব থেকেই উঠে আসা এক রক্তমাংসের চরিত্র উত্তম ভট্টাচার্য।
কলকাতা বইমেলায় তিনিও হাজির হয়েছেন নিজের লেখা বইয়ের সমগ্র নিয়ে। কত নং স্টলে তাঁর বই পাওয়া যাবে? নাহ্, কোনোরকম স্টল ছাড়াই ঘাসের ওপরেই তিনি হাজির গল্পের সম্ভার ‘একক উত্তম’ নিয়ে। বইমেলার ৮ নং প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে একটুখানি এগিয়ে হাতের ডানদিকে কোণায় তাঁর দেখা মিলবে। স্টলের জন্য আবেদন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু কোভিডের বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকায় সেই আবেদন ব্যর্থ হয়। তবে সেসব নিয়ে উত্তমবাবুর কোনো অভিযোগ নেই কারোর বিরুদ্ধে। তিনি নিজের মতোই খুশি নিজের কলমকে নিয়ে। পেশায় লেখক না হয়েও, নেশার টানেই তিনি হাজির হয়েছেন বইমেলায় নিজের গল্পের সম্ভার নিয়ে। নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে মিটিয়েছেন প্রকাশকদের ঋণ। সন্তান স্নেহে গড়ে তোলা এক একটি বইকে ভালোবেসেছেন নিজের প্রাণের চেয়েও। তাই স্টল না পাওয়ার হতাশাটাকে প্রতিবন্ধক হিসেবে বাড়তে দেননি কোনোভাবেই। নিজের মতো করেই বইমেলায় খুঁজে নিয়েছেন এক ফালি জায়গা।
তবে কি শুধুই আর্থিক অনটন? নাহ্, তাঁর গল্পের আরেক খলনায়ক হৃদরোগ। হৃদপিন্ডে বসানো পেসমেকার। ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী, হৃদযন্ত্রের ৭৫% কোষ বিকল। অতীতে হৃদরোগের দরুণ মৃত্যু আশঙ্কারও সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেকবার। তবে হৃদরোগকে তাঁর কলমের বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি কোনোকালেই। আর একেই বুঝি বেঁচে থাকা বলে। নিজের মতো করে বেঁচে থাকা। এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫। ইচ্ছে আছে আরও লিখবেন। তাঁর বইকে ঘিরে পাঠকদের কাছ থেকে সাড়াও পেয়েছেন বেশ ইতিবাচকভাবেই। ‘হারাধন কবিরাজ বলছি’ বইটিকে ঘিরে পাঠকদের মাঝে উত্তেজনা স্রোত চূড়ান্ত। তবে শুধু কলকাতা বইমেলা নয়, তিনি ডাক পেয়েছেন ধানবাদ বইমেলা থেকেও। ইচ্ছে কলকাতার বাইরেও আরো অনেক বইমেলায় যাবেন।
এই যে হৃদরোগকে সঙ্গে করে তিনি ঘুরে চলেছেন বইয়ের ঝোলা কাঁধে নিয়ে। বিশেষ কিছু লাভ? অর্থনীতির নিয়ম হয়তো তাঁকে বারণই করবে এই ঝুঁকি নিতে। তবে সব নিয়মনীতির বালাই তুলে, প্রশ্রয় দিয়েছেন ‘ইচ্ছে নীতি’কেই। তাঁর গল্পে মূল নায়ক এই প্রবল জীবনীশক্তিই। যার কাছে একে একে হেরে যায় সকল খলনায়ক। আর এখানেই বাকিদের থেকে অভিনব আর আলাদা ‘একক উত্তম’!
Discussion about this post