বৃক্ষ রূপেই কি ঈশ্বর? অধ্যাপকের হাত ধরে মিলল ‘গাছ পুজো’র খোঁজ!
সৃষ্টিকর্তার ঠিকানা? অরণ্য, অরণ্য! “তরুলতা জীবের আতিথ্যের আয়োজনে প্রবৃত্ত হয়ে তার ক্ষুধার জন্য এনেছিল অন্ন, বাসের জন্য দিয়েছিল ছায়া…” (অরণ্যদেবতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। ঈশ্বরজ্ঞানে মহীরুহর আরাধনা। নতুন কিছু কি? আফ্রিকা থেকে ফিলিপিন্স, এখানকার আদিবাসী জনজাতি পুজো করে এসেছে আকাশ-বাতাস-বৃক্ষকে। যুগ যুগ ধরে। ভারতবর্ষেও আছে এমন সহস্র উদাহরণ। পশ্চিমবঙ্গও এর অন্তর্ভুক্ত! বর্ধমানে গ্রামের পর গ্রাম, দেখা মিলবে গাছের প্রতি মানুষের বিশ্বাস, ভরসা আর ভক্তি।
‘৩৭ দিন’ এর সফরনামা। তার প্রতি বাঁকে বাঁকে বিস্ময়! রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক ডা. তাপস পালের পশ্চিমবঙ্গ সফরের ইতিবৃত্তের দলিল সেই ডায়েরি। যার নাম ‘৩৭ দিন’। তাঁর কলমে কোথাও উত্তরের সুন্দরী বাংলা আবার কোথাও অজয় পারের সাতকাহানিয়া গাঁ। ‘রূপসী বাংলা’র সেই দলিল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের কেবলমাত্র এক টুকরো রূপের প্রতিচ্ছবি এই ‘গাছ পুজো’।
রাঢ় বাংলার অলিগলিতে মুগ্ধতাকে অগ্রাহ্য করে কার সাধ্যি! লাল মাটির দেশে শাল-পিয়ালির ঘর। অজয়-দামোদর-ময়ূরাক্ষীর যত্নে বেড়ে উঠেছে রায় বাংলা। তবে শুধু প্রকৃতির একা নয়, এখানকার সংস্কৃতি-মানুষজন , অসাধারণত্বের অংশীদার। অজয় নদের কোলে একটি গ্রাম- সাতকাহানিয়া। পরপর হাটতলা, বনকাঠি, দামুদাপুর, নিমটাগুড়ি গ্রাম। এখানে জৈষ্ঠ মাসে দশেরার দিন বাউরিরা বটের নীচে ডালিপুজো করেন। পুজো করা হয় দুশো বছরের পুরোনো খেলকদম গাছকে। এই গ্রাম পেরোলেই আসবে গড়জঙ্গল। রামাই পন্ডিতের শূণ্যপুরাণের রচনা স্থান। ধর্ম ঠাকুরের মাহাত্ম্য নিয়ে লেখা ‘ধর্ম মঙ্গল’ ও রচনা হয়েছিল ঠিক এই জায়গায়। সবুজের কোলে, নিরালায় সুরক্ষিত!
এই গড় জঙ্গলেই অবস্থিত বিখ্যাত সেই চন্ডীতলা। সেখানেও পুজো চলে পাকুর গাছের। গড় জঙ্গল পেড়িয়ে মলানদীঘি। এখানে পুজো করা হয় আকর গাছকে। শুধু তাই নয়। যত্নসহকারে সেখানে সংরক্ষিত আছে উইয়ের ঢিপিও। আসলে মানুষ ও যে প্রকৃতির অংশ , এখানে ভোলেনি কেউ। বট-পাকুড় আরাধনার অন্তরালে আছে এখানকার মানুষের ভক্তি, বিশ্বাস। লৌকিক উপাচারের মিলেমিশে না হয় সমাজে রূপ পেল গাছ পুজো হিসেবে্ তবে যেভাবে ধূসরের ঝড় ধেয়ে আসছে সবুজের বুকে আশঙ্কা সেখানেই। তবে যে অরণ্য মানুষকে এত কিছু দিল, তাকে ঈশ্বর জ্ঞানে উপাসনা, রক্ষা করা সামান্য হলেও ইতিবাচক! বঙ্গের বুকে এমন সংস্কৃতি, উপাচার ছড়িয়ে পড়লে অন্ততঃ ক্ষতির কিছু নেই!
Discussion about this post