বছর শেষ হতে চলল তবু মহামারীর অভিশাপ ঘুচলো না। এই কদিনে কেমন যেন বদলাতে শুরু করেছে চেনা পৃথিবীটা। কবে আগের মতো হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশনে শোনা যাবে কুলিদের হাঁকডাক, কবে হই হই করে স্কুল থেকে ফিরবে ছেলের দল? কবেই বা পথনাটকে ভীড় জমাবে পথচলতি সাধারণ মানুষ? জানা নেই। আসলে যখন থেকে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব মিলেছে তখন থেকেই শুরু হয়েছে তাদের বেঁচে থাকার লড়াই, ‘স্ট্রাগল ফর এক্সিস্টেন্স’…
সৃষ্টিকাল থেকেই পৃথিবী করে চলেছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। পৃথিবীর ইতিহাসে এই মহামারীর ধ্বংসলীলা সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে।প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণায় হৃদিশ পাওয়া গেছে পৃথিবীর প্রথম মহামারীর নিদর্শন। এও সেই চিনে। চিনের উত্তর-পূর্বে “ইনার মঙ্গোলিয়া” প্রদেশে প্রথমে পাওয়া যায় নিওলিথিক যুগের কিছু বাসন-পত্র, এবং হাতিয়ার। যার থেকে মনে করা হয়, এখানে ছিল আগের কোন সভ্যতা। এরপর চিনের জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ২০১১ সালে শিবোটু শহরের কাছে হামিনমাংঘা (HaminMangha) নামন স্থানকে বেছে নিয়ে শুরু হয় খনন কার্য। আর এখানেই পাওয়া যায় মাটি চাপা পড়া ইতিহাসের খোঁজ।
প্রায় ৩০০০০ বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে খনন কার্য চালানোর পর সেখানে পাওয়া যায় প্রায় ১০০ রকমের বাসন-পত্র, পাথরের হাতিয়ার, জীবজন্তুর সিং, তীর ও তীরের ফলা এবং বর্ম। পাওয়া যায় আস্ত একটা গ্রাম। কিন্তু একি! হঠাৎ একটি বাড়ি খুঁড়তেই বেরোলো ৯৭টি এলোমেলো ছড়ানো কঙ্কাল! শুধু তাই নয়, কোন কোন কঙ্কালের শরীর আধপোড়া। কোথাও পাওয়া গেল আধপোড়া বাড়ির চালার অংশ।
বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ, তবে কি কোনোও কুসংস্কার বা খুন? অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পর গবেষকরা নিশ্চিত ধারণায় আসেন,আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে এই এলাকায় মহামারী বা মড়ক লেগেছিল। তাই আক্রান্তদের সমাহিত করা হত একটি জায়গায়। প্রথমে বয়স্করা মারা যায়, তাদের অন্য জায়গায় নিয়ে সমাহিত করা হয়। তারপরে যখন মড়ক তীব্র আকার ধারণ করে, তখন অন্যরাও আক্রান্ত হতে থাকে এবং বেশীরভাগই মারা যায়। যারা তখনো পর্যন্ত্ বেঁচে ছিল, তাদের ক্ষমতা ছিল না সবাইকে সমাহিত করার- তাই তারা সমস্ত মৃতদেহ জড় করে একটি ঘরের মধ্যে, এবং তারপর সেই ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তারা স্থান ত্যাগ করে। স্থান ত্যাগ না করলে তাদের মৃতদেহও এখানে-সেখানে পাওয়া যেত। তার পরে তারা আর ফিরে আসেনি। শুধু হামিনমাংঘা নয়, ওই এলাকা জুড়েই তখন মহামারীর মড়ক লেগেছিল।
তাই সংকটে মানুষ যেমন পড়ে, সংকট মোকাবিলার সর্ব শক্তিও তার আছে। কেবল সময়ের অপেক্ষা, এই দুঃসময় কাটিয়ে ঠিক আসবে করোনামুক্ত পৃথিবী। মানুষ মহামারী জয় করবেই।
Discussion about this post