বিগত ৯ আগস্ট সারা ভারতের কাছে একটা দৃষ্টান্ত তৈরী করেছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। তবে, এটাকে দৃষ্টান্ত না বলে কলঙ্কের আখ্যা দেওয়াটাই শ্রেয়। সেদিন খাস কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই উত্তাল রাজ্য। কলকাতার গন্ডি ছাড়িয়ে এই আন্দোলনের আঁচ গিয়ে পড়েছে অন্যান্য জেলা থেকে শুরু করে সারা দেশে এমনকি বিদেশেও। এমনকি, পাকিস্তানের চিকিৎসক সংগঠনের তরফেও বিবৃতি জারি করে এই ঘৃন্য অপরাধের বিরোধিতা করা হয়েছে। সকলের মুখে একটাই দাবি, দোষীদের শাস্তি চাই। এই প্রতিবাদ এখন আর শুধুমাত্র প্রতীকী জায়গায় থেমে নেই। যে যার মতো করে অংশ নিচ্ছেন প্রতিবাদে; দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে মুখরিত সারা বাংলার মানুষ। আর এই প্রতিবাদের তালিকা থেকে বাদ গেলেন না চা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে বাড়ির অতি সাধারণ মা-কাকিমারাও।
লালবাজারের সামনে যখন কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে ধর্ণা দিচ্ছিলেন ডাক্তার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সেই সময় কয়েকজনকে দেখা গেলো নিজেদের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে তারা ওই ডাক্তারদের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করলেন। এর মধ্যেই, প্রথম যিনি ডাক্তারদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন, তিনি হলেন লালবাজার এলাকার চাযের দোকানের মালিক দেবুদা। নিজের হাতে বেশ কিছু স্যান্ডুইচ বানিয়ে নিয়ে এসে তিনি ওই ডাক্তারদের হাতে তুলে দিলেন। এক ব্যক্তি দেবুদার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিয়ে বললেন, “দেবুদাকে ধন্যবাদ জানাই। ওর একটা সাধারণ চায়ের দোকান আছে। উনিও নিজের সবটা দিয়ে এই আন্দোলনে অংশ নিলেন।” শুধু দেবুদা একাই নন, আরো অনেক সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেনীর মানুষদের দেখা গেলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। এক ব্যক্তি গরমের মধ্যে যাতে ডাক্তারদের কষ্ট না হয়, সেই জন্য হাতপাখা দিয়ে গেলেন ডাক্তারদের।
এর মধ্যেই এক এমন পুলিশকর্মীর খোঁজও মিললো যিনি নিজের খরচে ডাক্তারদের ফ্রুট জ্যুসের টেট্রাপ্যাক কিনে দিলেন। ডাক্তারদের মধ্যে চা ও বিস্কুট বিতরণ করলেন ওই এলাকার চশমা বিক্রেতারা। এছাড়াও এক জুনিয়র ডাক্তার বললেন, পাশের বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা কাকিমারা তাদের জন্য ভাত, ডাল, ও বেগুনি বানিয়ে খাইয়েছেন। একটা দীর্ঘ সময় ধরে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা নাকি চিকিৎসা করছেন না। একপ্রকার এই ধরণের সরকারি হাসপাতালে যাওয়া তথাকথিত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের মনে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ তৈরী করার চেষ্টা চলছিল সব মহল থেকেই। তবে যেভাবে এই লোকগুলো আজ ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ালেন, তাতে এটা প্রমাণ হয়ে গেলো, ওই চেষ্টা বিফলেই গেছে। বরং, এই খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের সৎ আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে অসাধু লোকগুলোর গালে সজোরে থাপ্পড়ই কষালেন বটে।
Discussion about this post